রোজ ১০০ থেকে ১২৫টি চুল পড়া স্বাভাবিক। এ সংখ্যা যখন বেড়ে যায়, তখন তা সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। নারী-পুরুষ উভয়ই চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। তবে নারীর তুলনায় পুরুষেরা এ সমস্যায় বেশি ভোগেন। নারীদের মধ্যে চুল পড়া নিয়ে বেশি উদ্বেগ দেখা যায়।
নারীদের চুল পড়ার সমস্যাকে বলে অ্যানড্রোজেনেটিক অ্যালোপিসিয়া। এ সমস্যায় মাথার উপরিভাগে ও দুই পাশের চুল পড়ে যায় কিংবা পাতলা হয়ে যায়। নানা কারণে চুল পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। আসুন, কারণগুলো জেনে নিই।
পুষ্টির অভাব
ডায়েট করতে গিয়ে নারীরা অনেক সময় পুষ্টিকর খাবার কম খান। এ সময় প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদান, বিশেষত আমিষ, খনিজ ও ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়। চুলের স্বাস্থ্যের জন্য আমিষ বেশ উপকারী। এর ঘাটতি হলে চুল পড়া শুরু হতে পারে। অনেক নারীর পাতে সুষম খাদ্যোপাদান থাকে না। অনেকে আমিষের তুলনায় শর্করা বেশি খান। খাদ্যতালিকায় মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডালের মতো খাবার রাখতে হবে। ভিটামিন বি১২ ও ভিটামিন ডি চুলের বৃদ্ধি ঘটায় ও মাথার ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। তাই এ দুটি ভিটামিনের অভাবে চুল পড়তে পারে। মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারে ভিটামিন১২ ও ভিটামিন ডি আছে। যাঁরা সূর্যালোকের সংস্পর্শে কম আসেন, তাঁদের ভিটামিন ডির ঘাটতি হতে পারে।
ওষুধ
কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িতে প্রোজেস্টেরন হরমোন থাকে। এটা নারীর চুল পড়ার অন্যতম কারণ। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ার আগে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জেনে নিতে হবে। অন্য কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও চুল পড়তে পারে।
হরমোনজনিত
গর্ভধারণের সময় একজন নারীর শরীরে নানান হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। এর প্রভাবে চুল পড়তে পারে। গর্ভধারণের তিন থেকে চার মাস পর পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক। এরপরও চুল পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যায় ও পিসিওএসে চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে।
চুলের স্টাইল
নারীর চুলের নানা স্টাইল বা ধরন চুল পড়ার কারণ হতে পারে। সব সময় উঁচু করে, শক্ত করে বেঁধে রাখলে চুল ভেঙে যায়। ফলে চুল পড়া শুরু হতে পারে। এ ছাড়া চুলে বারবার রং করা ও রিবন্ডিং চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
রোগবালাই
দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা, রক্তস্বল্পতা, ওজন কমে যাওয়া, হজমের সমস্যা, মানসিক চাপ, ডায়াবেটিস, মূত্রনালির প্রদাহ, মেনোপজ, শরীরে ভিটামিন এ-এর আধিক্য, নানা সংক্রমণের কারণে চুল পড়া শুরু হতে পারে।
ডা. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা