ছানির অস্ত্রোপচারের পরও কি দৃষ্টির সমস্যা থাকে
সব মানুষের চোখে একটি প্রাকৃতিক লেন্স থাকে। এই লেন্স দেখতে অনেকটা ডিস্ক আকৃতির ও স্বচ্ছ। চক্ষুগোলকের অভ্যন্তর ভাগের সামনের অংশে আড়াআড়ি এর অবস্থান।
হিউমেন লেন্সের কাজ হচ্ছে, আলোকরশ্মিকে চোখের রেটিনায় আপতিত হতে সাহায্য করা ও যেকোনো বস্তু দেখা নিশ্চিত করা। কোনো কারণে এই লেন্স স্বচ্ছতা হারালে অর্থাৎ ঘোলা হলে আলোকরশ্মি চোখের ভেতরে প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ জন্য দেখা বিঘ্নিত হয়। লেন্সের এই ঘোলা অবস্থাকেই বলে ক্যাটারেক্ট বা ছানি।
ছানির একমাত্র চিকিৎসা অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ঘোলা লেন্স অপসারণ করে একটি স্বচ্ছ কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়। এর আগে লেন্সের পাওয়ার নির্ধারণ করা হয়। একে বলা হয় বায়োমেট্রি। কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করলে অস্ত্রোপচারের পর সেই চোখে দৃষ্টি ফিরে আসবে। এটিই স্বাভাবিক। তবে কোনো কোনো সময় ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায়। কখনো কখনো ছানি অস্ত্রোপচারের পরও দৃষ্টি সমস্যা পুরোপুরি মেটে না।
কেন এমন হয়
দৃষ্টিশক্তি দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমত, আলোকরশ্মি রেটিনায় আপতিত হওয়া আবশ্যক। এখানে লেন্স মুখ্য ভূমিকা রাখে। দ্বিতীয়ত, রেটিনায় বিদ্যমান স্নায়ু বা রিসেপ্টরের সক্ষমতা অটুট থাকতে হবে; যাতে রেটিনা আপতিত আলোকরশ্মিকে তড়িৎপ্রবাহে রূপান্তর করতে পারে। কারণ, এই তড়িৎপ্রবাহ মস্তিষ্কে পৌঁছে বস্তুর ছবি তৈরি করে দেখার বিষয়টিকে পরিস্ফুটিত করে।
ছানির অস্ত্রোপচারে আলোকরশ্মির আপতিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও রেটিনায় সমস্যা থাকলে সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত হবেই। ফলে অস্ত্রোপচার যথাযথভাবে হলেও দৃষ্টির সমস্যা রয়ে যায়।
রেটিনোপ্যাথি থাকলে যা করা উচিত
রেটিনার সমস্যার অন্যতম কারণের মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি। একে বলা হয় রেটিনোপ্যাথি। রেটিনোপ্যাথি আগে থেকেই থাকলে ছানির অস্ত্রোপচারের পরও দৃষ্টির সমস্যা কিছুটা থেকে যেতে পারে। চোখের অসুস্থতা যেমন গ্লুকোমা, মেকুলার ডিজেনারেশন, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট, মেকুলার হোল, রক্তনালি ও রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা, ইউভিয়াইটিসের জটিলতা ইত্যাদি কারণে ছানির অস্ত্রোপচারের পরও অনেক সময় ভালো না দেখার আশঙ্কা থেকে যায়। এসব ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের আগেই ভালো করে সবকিছু পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন।
এমন আশঙ্কা আগে থেকে আঁচ করা গেলে বিষয়টি রোগীকে আগেই জানিয়ে রাখতে হবে। তাহলে অস্ত্রোপচারের পর ভুল-বোঝাবুঝির আশঙ্কা থাকে না। রেটিনার সমস্যাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।
অনেক সময় ছানির কারণে রেটিনার সমস্যা নিরূপণে কিছুটা অস্পষ্টতা থাকে, যা ছানির অস্ত্রোপচারের পর স্পষ্ট হয়। ফলে রেটিনার সমস্যা আগে থেকে আঁচ করা গেলে আগেভাগেই ছানির অস্ত্রোপচার করিয়ে নেওয়া ভালো। কারণ, রেটিনার সমস্যা শনাক্ত ও চিকিৎসা করাতে ছানি অপসারণ অনেক সময় জরুরি হয়ে পড়ে। ছানি অপসারণ করা হলে রেটিনোপ্যাথির জন্য লেজার চিকিৎসার মতো কিছু পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হয়।
ডা. মো. ছায়েদুল হক, চক্ষুরোগবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, আদাবর, ঢাকা