মস্তিষ্কে হঠাৎ রক্তক্ষরণ হয় যে কারণে

অনেক সময় শোনা যায়, অল্প বয়সী কেউ আকস্মিক মস্তিষ্কে ব্যাপক রক্তক্ষরণে মারা গেছেন। এমন দুঃখজনক ঘটনার অন্যতম একটি কারণ হলো মস্তিষ্কে অ্যানিউরিজম। অ্যানিউরিজম হচ্ছে মস্তিষ্কের রক্তনালির মধ্যে ফোলা বেলুনের মতো অংশ। অংশটি হঠাৎ ফেটে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এটিকে হেমোরেজিক স্ট্রোক বলা হয়।

অ্যানিউরিজমের কারণ

বংশগত, উচ্চ রক্তচাপ, মাথার গুরুতর আঘাত, ধূমপান ইত্যাদি কারণ মস্তিষ্কে অ্যানিউরিজম হয়ে থাকে। জন্মগতভাবে থাকতে পারে কারও কারও।

লক্ষণ

মস্তিষ্কের বেশির ভাগ অ্যানিউরিজম ফাটে না এবং লক্ষণ বোঝা যায় না। তাই আগে থেকে বোঝা মুশকিল। তবে অন্য কারণে মাথার কোনো পরীক্ষার সময় শনাক্ত হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজম ফেটে গেলেই কেবল লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর মধ্যে রয়েছে—

  • হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা।

  • ঘাড় শক্ত হওয়া।

  • বমি বমি ভাব।

  • চোখের কাছে বা পেছনে ব্যথা।

  • অস্পষ্ট দৃষ্টি/দ্বিগুণ দৃষ্টি।

  • মুখের এক পাশ অবশ হওয়া।

মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমের ফলে সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ বা রক্তক্ষরণ হতে পারে। এমন রোগীদের প্রতি পাঁচজনের তিনজনই দুই সপ্তাহের মধ্যেই মারা যায়।

রোগ নির্ণয়

এনজিওগ্রাম হচ্ছে অ্যানিউরিজম শনাক্তের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা। পায়ের রক্তনালিগুলোর মাধ্যমে একটি ক্যাথেটার ঢুকিয়ে ঘাড়ের রক্তনালি দিয়ে মস্তিষ্ক পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। মস্তিষ্কের সব রক্তনালি দেখতে কন্ট্রাস্ট ডাই ইনজেকশনের পর এক্স-রে নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে অ্যানিউরিজমের অবস্থান নির্ণয় সহজ হয়। এ ছাড়া ব্রেন অ্যানিউরিজম শনাক্তে এমআরআই, সিটি স্ক্যান, সিএসএফ পরীক্ষা করা হয়।

চিকিৎসা

এমন আকস্মিক রক্তক্ষরণের বিপদ শুধু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। একটি উপায় হচ্ছে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে মগজের সংশ্লিষ্ট ধমনি পর্যন্ত চলে যাওয়া। ওই ক্যাথেটার দিয়েই অ্যানিউরিজমে প্ল্যাটিনামের অতিসূক্ষ্ম প্যাঁচানো তার ঢোকানো হয়, যার ফলে ফোলা জায়গায় আর কোনো রক্ত ঢুকতে পারে না। অ্যানিউরিজমকে মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ফলে ভেতরে আর রক্ত জমাট থাকে না; বরং তরল হয়ে আসে।

আরেকটি উপায় হলো সরাসরি মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার। এ জন্য সবচেয়ে কাছ দিয়ে অ্যানিউরিজম পর্যন্ত পৌঁছানো দরকার। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অ্যানিউরিজমে টাইটানের তৈরি ক্লিপ লাগাতে হয়। চাপ বাঁধা জায়গার ঠিক তলায় ক্লিপ বসিয়ে ফোলা জায়গায় আর যাতে রক্ত না ঢোকে, তার ব্যবস্থা করা হয়। দেশের কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতালে দ্রুত রোগীকে নিয়ে যেতে পারলে এই চিকিৎসা করা সম্ভব।

  • অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা