ত্বকে কেন বলিরেখা পড়ে, কমাবেন কীভাবে

বয়স বাড়ার সঙ্গে বলিরেখা পড়া খুব স্বাভাবিকছবি: সংগৃহীত

বয়স বাড়ার সঙ্গে বলিরেখা পড়া খুব স্বাভাবিক। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষের কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করে। ত্বক পাতলা হয়ে যায়। ত্বকের আর্দ্রতা ও স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়। ত্বক স্বাভাবিকতা হারায়। এ কারণে ত্বকে বলিরেখা, ভাঁজ বা বিভিন্ন দাগ দেখা দেয়।

বলিরেখার ক্ষেত্রে বংশগত, জীবনযাপন রীতি, পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, সূর্যের আলো ভূমিকা রাখে। অনেকের ধারণা, বলিরেখা কমানোর কোনো উপায় নেই। তবে বর্তমানে এর কিছু আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি আছে।

কেন পড়ে

পর্যাপ্ত না ঘুমানো, ভুলভঙ্গিতে শোয়া, শারীরিক পরিশ্রম না করা বা অতিরিক্ত পরিশ্রম করা, শরীরচর্চা না করা, চোখ-মুখ কুঁচকে থাকার অভ্যাস ত্বকে বলিরেখার কারণ। বাতাসে থাকা ধোঁয়া, ধুলাবালু বা নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড গ্যাস লোমকূপের মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করলে শরীরে কোলাজেন উৎপাদন কমে যায়। ফলে ত্বকে শুষ্কতা তৈরি হয়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিক ফাইবারের ক্ষতি করে। এ ফাইবার সংযোজক টিস্যু গঠন করে, যা ত্বককে দেহের সঙ্গে জুড়ে থাকতে সহায়তা করে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ত্বক দুর্বল হয়ে যায় ও নমনীয়তা হারায়।

যাঁরা বেশি রোদে কাজ করেন বা বাইরে দীর্ঘ সময় খেলাধুলা করেন, তাঁদের অল্প বয়সেই বলিরেখা পড়ার ঝুঁকি বেশি। ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন, স্নেহ ও খনিজসমৃদ্ধ খাবারের ঘাটতি থাকলে ত্বক কুঁচকে যেতে পারে। ধূমপানের অভ্যাসেও ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধূমপান দেহের কোলাজেন, ইলাস্টিক ফাইবার ও প্রোটিওগ্লাইকান তৈরিতে বাধা দেয়, যা দেহের জৈব–সংশ্লেষ ও ত্বকের সংযোজক টিস্যুর মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে।

চিকিৎসা

  • বলিরেখা দূরীকরণে সর্বাধুনিক চিকিৎসার নাম ‘বোটক্স’। মূলত ইনজেকশনের মাধ্যমে এ চিকিৎসা করা হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ব্যথামুক্ত উপায়ে বোটক্স করা হয়। ২৫ বছর বয়সের বেশি যে কেউ এ চিকিৎসা নিতে পারেন। একবার বোটক্স নিলে পাঁচ থেকে ছয় মাস পরপর রিটাচ করতে হয়।

  • সূর্যালোকের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে ছাতা বা হ্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে। বায়ুদূষণের জন্যও সানস্ক্রিন ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

  • ত্বকের উপযোগী সাবান বা ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।

আরও পড়ুন

যেসব নিয়ম মানতে হবে

  • ধূমপান পরিহার করতে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

  • ভিটামিন এ, সি, ডি, ই এবং ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। শাকসবজি ও পর্যাপ্ত পানীয় গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে।

  • রাত জাগার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শোবার সময় মুখ বা গলার ত্বকে যেন বালিশের চাপ না পড়ে।

  • নিয়মিত শরীরচর্চা করা উচিত।

  • ভাজাপোড়া, বেশি তেলযুক্ত খাবার, বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন। মাছ, মাংস, ডিম খেতে হবে নিয়মিত। ফাস্ট ফুড ও চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

  • অধিক সূর্যালোক এড়িয়ে চলবেন। ধুলাবালু, ময়লা পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।

ডা. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, ত্বক-চর্ম-যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা

আরও পড়ুন