ইলিশ তো শুধু মাছ নয়, বাঙালির আবেগ আর ঐতিহ্যের নাম। উৎসবে, বৃষ্টির দিনে বাঙালির পাতে ইলিশ থাকতেই হবে। ইলিশ মাছ খেতে যেমন মজাদার, তেমনই এর পুষ্টিগুণও অনেক বেশি।
উপকারিতা
ইলিশের প্রোটিন প্রথম শ্রেণির। সব এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড এতে পাওয়া যায়। এল-আরজিনিন অ্যামাইনো অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এল-লাইসিন অ্যামাইনো অ্যাসিড শিশুর পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও ক্ষুধামান্দ্য দূর করে। ইলিশের প্রোটিন কোলাজেনসমৃদ্ধ। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে কোলাজেন।
ইলিশে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা–৩ ও ওমেগা–৬ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড উচ্চ রক্তচাপ, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। বিশেষজ্ঞরা সপ্তাহে অন্তত দুই দিন সামুদ্রিক মাছ এ কারণেই খেতে বলেন।
ইলিশে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে।
ইলিশের আয়রন রক্তস্বল্পতা রোধ করে এবং ভিটামিন সি আয়রনের শোষণকে ত্বরান্বিত করে।
ইলিশের পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন রাখবেন যেভাবে
ইলিশ অতিরিক্ত ভেজে রান্না করলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অপচয় হতে পারে। তাই মাছ হালকা ভেজে রান্না করতে হবে। অনেক সময় ধরে রান্না করলে ভিটামিন সি, পটাশিয়ামসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হতে পারে। বেকড ইলিশ, ভাঁপা ইলিশ আরও ভালো।
ইলিশে অ্যালার্জি
অনেকের ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছে অ্যালার্জি থাকে। কারণ, সামুদ্রিক মাছে হিস্টিডিন নামের এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে।
এল-হিস্টিডিন ডিকার্বোক্সিলেজ নামের এনজাইমের প্রভাবে হিস্টিডিন থেকে হিস্টামিন তৈরি হয়ে থাকে, যা অনেকের শরীরে অ্যালার্জি তৈরি করে। কিছু বিশেষ ব্যাকটেরিয়া এ এনজাইম সংশ্লেষণে সহায়তা করে। পানি থেকে মাছ ডাঙায় তোলার পর ১৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় থাকলে এল-হিস্টিডিন ডিকার্বোক্সিলেজ সংশ্লেষণ হতে পারে। তাই সঠিক নিয়মে ইলিশ সংরক্ষণ করতে পারলে হিস্টামিন তৈরি হতে পারে না।
এ ছাড়া ডিপ ফ্রিজে অনেক দিন ইলিশ সংরক্ষণ করলেও একই সমস্যা হতে পারে। যাঁদের অ্যালার্জি আছে, তাঁরা প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল