অন্তঃসত্ত্বা নারীর রোগবালাই গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, শারীরিক ত্রুটি নিয়ে শিশু জন্ম নিতে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
গর্ভবতী মায়ের শরীরের প্ল্যাসেন্টা বা গর্ভফুলের মাধ্যমে অথবা সন্তান প্রসবের সময় শিশুর শরীরে কিছু জীবাণু ঢুকতে পারে। যেমন রুবেলা, টক্সোপ্লাজমা, এইচআইভি, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, হারপিস সিমপ্লেক্স, গ্রুপ বি-স্ট্রেপটোকক্কাস, করোনা, সাইটোমেগালো ভাইরাস, জিকা ভাইরাস, লিস্টেরিয়া, ভ্যারিসেলা ইত্যাদি।
এমআর টিকা
গর্ভের প্রথম তিন মাসের মধ্যে রুবেলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে নারীর গর্ভপাত, নবজাতকের মৃত্যু এবং শিশু জন্মগত জটিলতা নিয়ে জন্ম নিতে পারে। আক্রান্ত শিশুর হার্টে ছিদ্র, চোখে ছানি বা অন্ধত্ব এবং মস্তিষ্কের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেসব মেয়ে শৈশবে বা ১৫ বছর বয়সে এমআর (হাম-রুবেলা) টিকা নেয়নি, তাদের রুবেলা প্রতিরোধে পরবর্তী সময়ে দুই ডোজ টিকা নিতে হবে। তবে গর্ভধারণের কমপক্ষে এক মাস আগে এমআর টিকা নিতে হবে।
টিটি টিকা
নবজাতককে ধনুষ্টঙ্কার থেকে সুরক্ষায় অন্তঃসত্ত্বা নারীকে টিটি টিকা নিতে হবে। যদি ১৫ বছর বয়সে মেয়েদের টিটি টিকার পাঁচটি ডোজ দেওয়া হয়, তাহলে গর্ভাবস্থায় আর এই টিকা নিতে হবে না। টিকা না নিলে গর্ভাবস্থায় পাঁচ মাসের পর এক মাসের ব্যবধানে পর পর দুটি টিটি টিকা নিতে হবে এবং শেষ ডোজটি অবশ্যই সন্তান প্রসবের অন্তত এক মাস আগে নিতে হবে। গর্ভধারণের আগে দুই ডোজ টিকা নিলে গর্ভকালীন পাঁচ মাসের পর তৃতীয় ডোজ এবং সন্তান প্রসবের পর চতুর্থ ও পঞ্চম ডোজ নিতে হবে। গর্ভধারণের আগে তিন ডোজ নিলে এবং গর্ভকালীন এক বছর অতিক্রান্ত না হলে সন্তান প্রসবের পর চতুর্থ ও পঞ্চম ডোজ নিতে হবে।
টিড্যাপ টিকা
টিটেনাস, ডিপথেরিয়া, পারটুসিস একসঙ্গে টিড্যাপ টিকা গর্ভাবস্থায় ২৭ থেকে ৩৬ সপ্তাহের মধ্যে নিতে হবে। এই টিকা গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময়ই নিরাপদ
হেপাটাইটিস-বি টিকা
গর্ভধারণের আগেই নারীদের তিন ডোজ হেপাটাইটিস-বি টিকা নেওয়া জরুরি। তবে গর্ভাবস্থায় মা আক্রান্ত হলে নবজাতককে জন্মের ১২ ঘণ্টার মধ্যে এক ডোজ ‘বি’ ভাইরাস ভ্যাকসিন এবং এক ডোজ ইমিউনোগ্লোবিউলিন আলাদাভাবে দিতে হবে।
করোনা টিকা
গর্ভাবস্থায় ১৪ সপ্তাহ পরে এবং দুগ্ধ দানকারী মায়েরাও করোনা টিকা নিতে পারবেন।
ফ্লু ভ্যাকসিন (ইনফ্লুয়েঞ্জা)
গর্ভাবস্থায় এই টিকা নিলে মা ও বাচ্চা জন্মের পরে ফ্লু–সংক্রান্ত জটিলতা থেকে অনেক মাস পর্যন্ত রক্ষা পায়।
নিউমোকক্কাল টিকা
অন্তঃসত্ত্বা মায়ের দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগ, যেমন ডায়াবেটিস অথবা কিডনি রোগ থাকলে বা রোগীর সংস্পর্শে এলে নিউমোকক্কাল টিকা (১৪ সপ্তাহের পর নেওয়াই উত্তম) নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, যা নিউমোনিয়া থেকে মা ও নবজাতককে সুরক্ষা দেয়।
গর্ভাবস্থায় যেসব টিকা নয়
হাম, রুবেলা, মাম্পস, চিকেন পক্স, বিসিজি, টাইফয়েড, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস টিকা গর্ভাবস্থায় নেওয়া যাবে না।
ডা. কাকলী হালদার, সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ