ধোঁয়াহীন তামাক বেশি ক্ষতিকর

যারা একাধিক ধরনের তামাক সেবন করে, তাদের ক্যানসারের ঝুঁকি সর্বাধিকফাইল ছবি: রয়টার্স

তামাকের সঙ্গে ক্যানসারের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না, সবাই এটা জানে। তবে ধূমপান নিয়ে যতটা ব্যাপক প্রচারণা ও সচেতনতা তৈরি হচ্ছে, সেখানে ধোঁয়াহীন তামাকের বিষয়ে আমরা ততটাই উদাসীন। এমনকি আজকাল বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে জর্দা পান পরিবেশন করা যেন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

দেশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মুখের ক্যানসারের হার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ, ধূমপানের চেয়ে জর্দার ব্যবহার। গুল, সাদাপাতা, নস্যি, খুইনি, চমনবাহার, খয়ের, পানমসলা—সবই ক্যানসারের কারণ। তবে যারা একাধিক ধরনের তামাক সেবন করে, তাদের ক্যানসারের ঝুঁকি সর্বাধিক। বলা হয়, ধোঁয়াহীন তামাক বেশি ক্ষতিকর।

তামাক ছাড়তে আত্মনিয়ন্ত্রণ জরুরি। স্পষ্টভাবে জানতে ও মানতে হবে যে তামাকের মধ্যে কোনো উপকারী কিছু নেই, বরং এর মধ্যকার ভয়ংকর উপাদান শরীরের প্রতিটি অঙ্গের অপূরণীয় ক্ষতি করে।

কেন ধোঁয়াহীন তামাকে বেশি ঝুঁকি

নানা নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য গবেষণা ইতিমধ্যে স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে, জর্দাসহ ধোঁয়াহীন সব ধরনের তামাকে মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকালয়েড ও নিকোটিন রয়েছে, যা ক্যানসার সৃষ্টিসহ নানা শারীরিক জটিলতা তৈরিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রাখে।

দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের দেশের পাশাপাশি ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানে অনেকেই জর্দা, কাঁচা সুপারি, চুন, পানমসলা নিয়ে মুখের এপাশ-ওপাশ করে। কেউ আবার মুখের মধ্যে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। মুখের মধ্যকার নরম কলার সরাসরি সংস্পর্শে থাকা এসব দ্রব্য নানা ধরনের ক্ষত বা আলসার তৈরি করে। ক্রমান্বয়ে এমনটা চলতে থাকলে এখানে নানা ধরনের প্রিক্যানসারাস জটিল ক্ষত, যেমন লাইকেনপ্ল্যানাস, লিউকোপ্লাকিয়া, ইরাইথোপ্লাকিয়া তৈরি করে। পরে সেবনকারী বুঝে ওঠার আগেই ক্যানসারের রোগী হয়ে যায়।

এমন অনেক রোগী আছে, যাঁদের মুখে নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষত হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের কোনো সচেতনতা নেই। এ ছাড়া তামাক দাঁত, ঠোঁট বা মাড়ির রং নষ্ট করে ও মুখে বিব্রতকর গন্ধ তৈরি করার মাধ্যমে সামাজিকভাবে একজন মানুষকে হেয় করে বা তাঁর আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়।

তামাক ছাড়তে করণীয়

তামাক ছাড়তে আত্মনিয়ন্ত্রণ জরুরি। প্রচারমাধ্যমে নানা গবেষণার তথ্য প্রচার করার মাধ্যমে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। স্পষ্টভাবে জানতে ও মানতে হবে যে তামাকের মধ্যে কোনো উপকারী কিছু নেই, বরং এর মধ্যকার ভয়ংকর উপাদান শরীরের প্রতিটি অঙ্গের অপূরণীয় ক্ষতি করে।

অনেকে বলে, দাঁত শিরশির বা মাড়ির ব্যথা করলে তাঁরা সামান্য গুল বা জর্দা মুখে দেন। এতে নাকি আরাম হয়। এটি ভুল ধারণা। দাঁত বা মাড়ির সমস্যা থাকলে এর জন্য চিকিৎসা নিতে হবে। জর্দা বা গুল দাঁত-মাড়ির ক্ষতি দ্বিগুণ করে।

  • সদিচ্ছা, মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তামাক পরিহার করুন।

  • পর্যাপ্ত সুষম খাবারের সঙ্গে মৌসুমি ফল, আদা-চা, চিনিমুক্ত চুইংগাম, টক দই, দুধ, পর্যাপ্ত তরল সেবন এবং ব্যায়াম, মেডিটেশন ও নিয়মিত সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করা জরুরি।

  • মুখে ছোট-বড় যেকোনো ক্ষত, গোটা বা রঙের পরিবর্তন যেখানে ব্যথা হোক বা না হোক, দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলেই দ্রুত ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ক্যানসার শুরুতে শনাক্ত হলে চিকিৎসায় সফলতা প্রায় শতভাগ।

  • ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান