জন্মের শুরু থেকে পরবর্তী সময়ে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের হাড়ের রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এর পেছনে রয়েছে নানা কারণ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব রোগে উপসর্গমাফিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এমন কিছু রোগ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
রিকেটস
শিশুর বর্ধনশীল হাড়ে সঠিকভাবে খনিজ পদার্থ (ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস) যুক্ত হতে না পারার কারণে এ রোগ দেখা দেয়। ভিটামিন ডি-এর পরিমাণগত ও গুণগত মানের অভাবও কারণ। এই ভিটামিনের মূল উৎস সূর্যালোক। চাহিদা পূরণে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে ৩টার মধ্যে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সূর্যালোকে থাকতে হবে। বিকল্প হলো, ওষুধের মাধ্যমে চাহিদাপূরণ। এ রোগে মূলত হাড় নরম হয়ে পা বেঁকে যায়, ব্যথা ও হাঁটতে কষ্ট হয়, হাড় ভেঙেও যেতে পারে।
অস্টিওজেনেসিস ইমপারফেক্টা
জন্মগত এ রোগে শরীরের হাড় ভঙ্গুর প্রকৃতি হওয়ায় বারবার ভেঙে যায়। মুখ্য কারণ, জেনেটিক মিউটেশনের মাধ্যমে কোলাজেন-১ সঠিকভাবে তৈরি হতে না পারা। ক্রমাগত হাড় ভেঙে যাওয়া ছাড়া অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে চোখের নীলাভ রং, ভঙ্গুর চর্ম ও এর নিচে রক্ত জমা, ক্ষয়প্রাপ্ত হলদে দাঁত, কানে না শোনা, খাটো হওয়া। এমনকি অকালমৃত্যুও হতে পারে এ কারণে।
মিউকোপলিস্যাকারয়ডোসিস
এটিও জন্মগত রোগ। এ রোগে মিউকোপলিস্যাকারাইড নামে শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিক্রিয়াজনিত ত্রুটির কারণে বিভিন্ন অঙ্গে জমে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। এতে মুখমণ্ডলের বিকৃতি, মানসিক-শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, হাড়ের জোড়া শক্ত হয়ে যাওয়া এবং কিছু অঙ্গের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়ে থাকে।
অ্যাকন্ড্রোপ্লাসিয়া
অতিশয় খর্বাকৃতির মানুষের বেশির ভাগই এ রোগের শিকার হয়। এ রোগে হাত-পা অনেক খাটো ও মাথা বড় হয়, তবে বুদ্ধি ও হাঁটাচলা ঠিক থাকে।
স্কেলিটাল ডিসপ্লাসিয়া
স্কেলিটাল ডিসপ্লাসিয়া মূলত অস্থি তৈরির সময় বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি থেকে হয়ে থাকে। অসামঞ্জস্যপূর্ণ খর্বাকৃতির অন্যতম কারণ এটি। কখনো একে রিকেটস ভেবে চিকিৎসা করা হয়।
ব্লাউন্ট ডিজিজ
এ রোগেও শিশু পা বাঁকা নিয়ে আসতে পারে। হাঁটুর জোড়ায় গ্রোথ প্লেট আক্রান্ত হয়। জন্মের কয়েক মাসের মধ্যে এ রোগ দেখা দিতে পারে। ব্রেসিং ও সার্জারির মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়।
অস্টিওপেট্রসিস
জন্মগত এ রোগে হাড়ের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এখানে অস্টিওক্লাস্ট নামের অস্থিকোষ পরিপক্ব হতে পারে না, যা হাড়ক্ষয়ে ভূমিকা রাখে। অস্থিমজ্জা না থাকায় ঘন ঘন সংক্রমণ, হাড় ভেঙে যাওয়া, রক্ত কমে যাওয়া, মাথা ও কিছু অঙ্গের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, দাঁত উঠতে দেরি হয়। স্নায়ু আক্রান্ত হলে শিশু খেতে পারে না, বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, কানে শুনতে পায় না, চোখে দেখতে পারে না। স্টেম সেল বা বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট এ রোগের স্থায়ী চিকিৎসা।
ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগবিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ঢাকা শিশু হাসপাতাল