কীভাবে বাড়াবেন সুখের হরমোন

সুখের হরমোন বাড়ানোর বেশ কিছু উপায় আছে। মডেল: জারা ও শুভছবি: কবির হোসেন

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উচ্চকণ্ঠে সবাইকে আনন্দে থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব? কতজনই–বা পারছি সদা আনন্দে থাকতে? অনেকেরই জানা নেই, সুখ বা আনন্দে থাকার জন্য প্রভাব রাখে কিছু হরমোন। এগুলোকে আমরা বলতে পারি ‘হ্যাপি হরমোন’।

হরমোন হলো কিছু বিশেষ রাসায়নিক, যা দেহে বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করে আর আমাদের শারীরিক কর্মকাণ্ড থেকে মানসিক সুস্থতা—সব নিয়ন্ত্রণ করে। চারটি প্রধান হরমোন রয়েছে, যা প্রাথমিকভাবে আমাদের নানা অনুভূতি ও সংবেদনশীলতা তৈরির জন্য দায়ী। আসুন, জেনে নিই সুখানুভূতি সৃষ্টিকারী চারটি মূল হরমোন সম্পর্কে:

ডোপামিন

ডোপামিনকে প্রায়ই ‘সুখী হরমোন’ বলা হয়। এটির নিঃসরণে সুখ ও সুস্থতার অনুভূতি হয়। মস্তিষ্কের পুরস্কার ব্যবস্থার এটি একটি প্রাথমিক চালক। যখন আমরা আনন্দদায়ক কিছু অনুভব করি, তখন এটি বৃদ্ধি পায়। কাজে প্রশংসিত হলে আপনি ডোপামিন ঢেউ পাবেন। ভালোবাসলে ডোপামিনের মাত্রা আকাশচুম্বী হবে। খাবার গ্রহণ, যৌনতা, কেনাকাটা, হাঁটাচলা, হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি কার্যকলাপ থেকে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিন তৈরি হয়।

সেরোটোনিন

সেরোটোনিন ‘ফিল-গুড হরমোন’ নামে পরিচিত। সেরোটোনিন উদ্বেগ ও বিষণ্নতা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যায়াম, বাইরে সময় কাটানো এবং রাতের ভালো ঘুম সেরোটোনিন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

এন্ডোরফিন

ব্যায়ামের সঙ্গে বেশি সম্পর্কযুক্ত হরমোন এন্ডোরফিন। কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম হলো এন্ডোরফিন বাড়ানোর অন্যতম সেরা উপায়। শক্তিশালী এই হরমোন প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে, শরীর–মনের অস্বস্তি কমায় এবং বেশি আনন্দ দেয়।

অক্সিটোসিন

মানসিক বন্ধন ও পারস্পরিক সংযুক্তির জন্য সর্বাধিক পরিচিত অক্সিটোসিন। সন্তান প্রসবের সময় ও স্তন্যপান করানোর সময় একজন নারীর দরকার হয় এ হরমোন। কিন্তু সন্তান প্রসব করাই অক্সিটোসিন নিঃসরণ হওয়ার একমাত্র উপায় নয়। এই ‘ভালোবাসার হরমোন’ হাত ধরা, আলিঙ্গন, চুম্বন, শরীর ম্যাসাজ, যৌনতাসহ যেকোনো ধরনের অন্তরঙ্গ স্পর্শের কারণেও যথেষ্ট পরিমাণে নিঃসরিত হয়।

যেসব ক্রিয়াকলাপে সুখের হরমোন বাড়ে

  • প্রিয়জনের সঙ্গে আলিঙ্গন

  • ব্যায়াম

  • অ্যারোমাথেরাপি

  • ম্যাসাজ

  • যৌনক্রিয়া

  • ভালো গান শোনা

  • ধ্যান করা

  • বাইরে সময় কাটানো

  • ভালো ঘুম

  • কমেডি নাটক বা সিনেমা উপভোগ

বিষাদ, অবসন্নতা, মন খারাপের পেছনে থাইরয়েড, এড্রিনাল গ্রন্থির হরমোন কমে যাওয়া, ভিটামিন বি ১২ বা ভিটামিন ডির মতো কিছু পুষ্টির ঘাটতিও দায়ী হতে পারে। জীবনে উদ্বেগ, আতঙ্ক, দুঃখকষ্ট থাকবেই। এর সঙ্গে মানসিকভাবে লড়াই করতে চাই ‘হ্যাপি হরমোনের’ চর্চা।

  • ডা. শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়