রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে সে অবস্থাকে রক্তশূন্যতা বলা হয়। বিভিন্ন কারণে এটি হতে পারে। এটি নিজে রোগ নয়; বরং অন্য রোগের উপসর্গ। তাই রক্তশূন্যতা হলে প্রথমে কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি। এর মূল চিকিৎসা হলো এটির কারণ দূরীকরণ। রক্তের বা হিমোগ্লোবিনের বা আয়রনের অভাব পূরণ করা হলো সাময়িক একটি চিকিৎসা।
কারণ
জন্মগত রক্তরোগ, রক্তের ক্যানসার, বিভিন্ন রোগে রক্ত বেরিয়ে গেলে, কৃমি সংক্রমণ ইত্যাদি কারণে রক্তশূন্যতা হতে পারে।
ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিডের অভাবেও রক্তশূন্যতা হয়।
কোনো সময় রক্তের লোহিত কণিকা সময়ের আগেই ভেঙে যায় বলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
উপসর্গ
রক্তশূন্যতা হলে চোখের স্ক্লেরা (চোখের শ্বেতমণ্ডল), জিহ্বা, হাতের তালু ইত্যাদি ফ্যাকাশে দেখায়।
রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে।
বুক ধড়ফড় করে। মাথা ঝিমঝিম করে।
তীব্র রক্তশূন্যতা হলে হার্ট ফেইলিওর হতে পারে।
পরীক্ষা
রক্তের সিবিসি পরীক্ষায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম দেখায়। এরপর কারণ অনুসন্ধানে নানা ধরনের পরীক্ষা দরকার পড়ে; যেমন দেহে আয়রনের অভাব আছে কি না, মলের মাধ্যমে রক্ত যাচ্ছে কি না, অন্ত্রে বা পাকস্থলীতে কোনো ক্ষত বা ক্যানসার আছে কি না, নারীদের মাসিকের সঙ্গে বেশি রক্ত যাচ্ছে কি না বা কেন যাচ্ছে ইত্যাদি।
কখন পরিসঞ্চালন
রক্তশূন্যতা হলেই যে রক্ত দিতে হবে, তা নয়। কারণভেদে রক্ত পরিসঞ্চালন করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
যদি হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে নেমে যায়, রোগীর বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়।
অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর রক্তে হিমোগ্লোবিন ৮ গ্রাম/ডিএল থাকলে সাধারণত রক্ত পরিসঞ্চালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দীর্ঘমেয়াদি রক্তশূন্যতায় হিমোগ্লোবিন ৭ গ্রাম/ডিএল হলে রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয়।
কোনো কারণে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হলে বা শরীরের ৩০ শতাংশ রক্ত ক্ষরণ হলে (যেমন দুর্ঘটনায়) রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয়।
রক্তের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য রক্ত ও রক্তের উপাদান আলাদা আলাদা পরিসঞ্চালন করা হয়। আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা হলে আয়রন ইনজেকশন দেওয়া যায়, এতে রক্তের অপচয় রোধ করা যায়।
সাধারণ রক্তশূন্যতা হলে রেড সেল কনসেনট্রেট ব্যবহার যৌক্তিক। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে হোল ব্লাড বা সম্পূর্ণ রক্ত দেওয়া হয়।
উপযুক্ত ডোনার বা দাতা থেকে সংগ্রহ করে ও ব্লাড ব্যাংক ফ্রিজে নির্ধারিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা রক্ত পরিসঞ্চালন করার উপযোগী।
ব্লাড ব্যাংক ফ্রিজ থেকে বের করার আধা ঘণ্টার মধ্যে পরিসঞ্চালন শুরু করতে হয়। সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিসঞ্চালন শেষ করতে হয়।
ডা. ফারহানা ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা, ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা