কিডনি রোগীরাও যেসব ফল খেতে পারবেন
ফল খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এতে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার থাকে। ফলে স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ) কিছু ফল খেতে বারণ আছে। আজ আমরা জানব কিডনির রোগীরা কোন ফল খেতে পারবেন আর কোনটি পারবেন না।
কিডনি রোগীরা কোন ফল কতটুকু খেতে পারবেন আর কোনটি একেবারেই খেতে পারবেন না, তা নির্ভর করে তাঁর কিডনি রোগ কোন পর্যায়ে আছে, রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কেমন, ফলটিতে কতটুকু পটাশিয়াম ও অক্সালেট আছে, এগুলোর ওপর। আবার যেসব কিডনি রোগী ডায়ালাইসিস পাচ্ছেন, তাঁরা ডায়ালাইসিসের আগে পছন্দের ফলে পটাশিয়াম বেশি থাকলেও একটি খেতে পারবেন। কারণ, ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে তা বের হয়ে যাবে।
কোন কোন ফল খাওয়া যাবে
যেসব ফলে পটাশিয়াম কম থাকে, সেগুলো কিডনি রোগীরা খেতে পারবেন। যেমন
আনারস: দেশীয় ফলের মধ্যে আনারসে সবচেয়ে কম পটাশিয়াম থাকে। তাই কিডনি রোগীরা আনারস নির্দ্বিধায় খেতে পারবেন।
নাশপাতি: নাশপাতিতে পটাশিয়ামের পরিমাণ খুবই কম থাকে। আবার নাশপাতি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। সুতরাং এই ফল খেতে পারবেন।
আপেল: বলা হয়ে থাকে, প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না। কিডনি রোগীদের জন্যও আপেল খাওয়া নিরাপদ।
বেরি: যেকোনো ধরনের বেরি, যেমন স্ট্রবেরি, ক্রানবেরি, ব্লুবেরি কিডনির জন্য উপকারী। আবার এসব ফল কিডনি ও মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ কমাতেও সাহায্য করে। স্ট্রবেরি এখন আমাদের দেশেই চাষ হচ্ছে আর ক্রানবেরি জুস প্রায় সব সুপারশপে পাওয়া যায়।
তরমুজ: তরমুজে পটাশিয়াম খুব কম মাত্রায় থাকে, ফলে কিডনি রোগীদের জন্য খাওয়া নিরাপদ। কিন্তু তরমুজে প্রচুর পানি থাকে, তাই যেসব রোগীর পানি মেপে খেতে হয়, তাঁদের একটু হিসাব করে খেতে হবে।
কী কী ফল খাওয়া যাবে না
কলা: একটা মাঝারি আকারের কলায় প্রায় ৪২২ মিলি গ্রাম পটাশিয়াম থাকে। কিডনি রোগী, যাঁদের রক্তে পটাশিয়াম ৪ দশমিক ৫ মিলিগ্রামের বেশি থাকে, তাঁদের কলা বাদ দিতে হবে।
কমলা: কমলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা কিডনির জন্য উপকারী হলেও এতে প্রচুর পটাশিয়ামও থাকে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। একটা বড় সাইজের কমলাতে প্রায় ৩৩০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। কমলার জুসে পটাশিয়ামের মাত্রা আরও বেশি। তাই কমলা ও কমলার জুস কিডনি রোগীদের বাদ দিতে হবে অথবা খুব কম পরিমাণ খেতে হবে।
কামরাঙা: যে ফলটি কিডনি রোগীদের একেবারেই খাওয়া যাবে না সেটা হলো কামরাঙা বা স্টার ফ্রুট। কিডনিতে সমস্যা থাকলে কামরাঙা বা স্টার ফ্রুট টক্সিসিটি তৈরি করে, যা খুবই মারাত্মক। এতে কিডনি হঠাৎ বিকল হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
ড্রাই ফ্রুটস: বর্তমান সময়ে বিকেলের নাশতায় ড্রাই ফ্রুটস আমাদের অনেক প্রিয়। কিন্তু ৬৫ গ্রাম ড্রাই ফ্রুটসে প্রায় ৭৫৫ গ্রাম পটাশিয়াম থাকে। তাই কিডনি রোগীদের ড্রাই ফ্রুটস, যেমন খেজুর, কিশমিশ, বাদাম খাওয়ার আগে পরামর্শ নিতে হবে।
এ ছাড়া এখন আমাদের দেশে সহজলভ্য এমন কিছু বিদেশি ফল, যেমন এপ্রিকট, কিউয়ি, ফ্রুটিতে প্রচুর পটাশিয়াম আছে। কিউয়িতে প্রচুর অক্সালেট থাকায় কিডনিতে পাথর তৈরি করে। তাই এই ফলগুলো খাওয়ার আগে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
কিডনি রোগীদের পটাশিয়ামের মাত্রার ওপর কতটুকু ফল খাবেন, তা নির্ভর করে। এখন স্মার্টফোনে অনেক অ্যাপ আছে, যেখানে যে খাবার খাচ্ছি, তার পটাশিয়ামের মাত্রা হিসাব করা যায়। তারপরও কতটুকু ফল খাবেন, তা আপনার চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
ডা. আফলাতুন আকতার জাহান, মেডিসিন স্পেশালিস্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা