আপনার শিশু কি যা পায়, তা-ই মুখে দেয়? সমস্যাটি পাইকা ডিজঅর্ডার না তো?

দুই বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে সবকিছু মুখে দেওয়া ‘পাইকা ডিজঅর্ডার’ নয়। তাহলে কোন শিশু ‘পাইকা ডিজঅর্ডারে’ ভুগছে বলে ধরা হবে?

পাইকা ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্যে চিকিৎসক ও মা-বাবার একসঙ্গে কাজ করতে হবেছবি: সংগৃহীত

শিশুরা প্রায়ই খেলনা, ঘরের নানা জিনিসপত্র, এমনকি মাটিও মুখে দেয়। চারপাশের জগৎটা পুরোপুরি চিনে উঠতে পারে না বলেই শিশুরা এমনটা করে। সব বিষয়েই থাকে তাদের অফুরন্ত কৌতূহল। এমন অভ্যাস দুই বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক হিসেবে ধরা যায়। তবে শিশুরা কখনো কখনো এমন কিছু মুখে দেয় বা খেয়ে ফেলে, যা অনেক সময় বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তারপরও একে স্বাভাবিক হিসেবেই ধরা হয়। তাই দুই বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে সবকিছু মুখে দেওয়া ‘পাইকা ডিজঅর্ডার’ নয়। তাহলে কোন শিশু ‘পাইকা ডিজঅর্ডারে’ ভুগছে বলে ধরা হবে?

পাইকা ডিজঅর্ডার কী?

এর আগে জেনে নেওয়া যাক পাইকা ডিজঅর্ডার আদতে কী? পাইকা ডিজঅর্ডার একধরনের খাদ্যাভ্যাসজনিত সমস্যা। এটি হলে শিশুরা খাদ্য নয়, এমন সব বস্তু মুখে পুরে এবং খেয়ে ফেলে। আগেই বলেছি, দুই বছরের কম বয়সীদের সব মুখে দেওয়ার অভ্যাস থাকে। তবে তা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলেও যায়। কারণ, তখন শিশু কোনটা খাদ্য, কোনটা নয়, তা বুঝতে শেখে। তবে দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের বেলায় এমনটা হতে থাকলে তা পাইকা ডিজঅর্ডার।

কোন শিশুদের হয়?

যেসব শিশুর স্নায়ুর বিকাশজনিত সমস্যা আছে, যেমন অটিজম, ইন্টেলেকচুয়াল ডিজঅ্যাবিলিটি, মানসিক সমস্যা (যেমন সিজোফ্রেনিয়া), মানসিক চাপ, অপুষ্টি, এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্যাতিত শিশুদের মধ্যে পাইকা ডিজঅর্ডার দেখা যায়। পাইকা ডিজঅর্ডার হলে শিশুরা ময়লা, মাটি, পাথর, কাগজ, পেনসিল, ক্রেয়ন, বরফ, চুল, রং, চক এমনকি মল পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। এ ধরনের সমস্যা যদি এক মাসের বেশি স্থায়ী হয়, যা শিশুর বয়স বা বিকাশের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, সে ক্ষেত্রে একে পাইকা ডিজঅর্ডার হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

পাইকা ডিজঅর্ডার হলে কী হয়?

পাইকা ডিজঅর্ডারের জন্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা নির্ভর করে শিশু কোন ধরনের বস্তু খাবার হিসেবে গ্রহণ করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা দেয় রক্তশূন্যতা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, অপুষ্টি, লেড বা সীসার বিষক্রিয়া, অন্ত্রে প্রদাহ, মুখে বা দাঁতে আঘাত ও ইন্টেস্টিনাল অবস্ট্রাকশন।

করণীয় কী?

যত দ্রুত সম্ভব রক্তের পরীক্ষা, পেটের এক্স–রে করাতে হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্যে চিকিৎসক ও মা-বাবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শিশুরা যেসব জিনিস মুখে দেয়, সেসব যেন নাগালের বাইরে থাকে। শিশুদের বিভিন্ন গঠনমূলক খেলাধুলায় বিরত রাখতে হবে, যেমন কাদামাটি বা প্লেডো দিয়ে কিছু বানানো কিংবা লেগো দিয়ে কিছু তৈরি করা ইত্যাদি। শিশুর রক্তশূন্যতা ও জিঙ্কের অভাব পূরণ করতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানসিক রোগের চিকিৎসক এবং শিশু নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হতে পারে। আচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হতে পারে।

ডা. ফারাহ দোলা: বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর