ডায়াবেটিস হলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বা কার্যকারিতা কমে যায়। ইনসুলিনের কাজ হলো রক্তের গ্লুকোজ বা শর্করার বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা। ডায়াবেটিসের রোগীর সাধারণত রক্তে শর্করা বেড়ে যায়। এ জন্যই ডায়াবেটিসের রোগীদের শর্করা পরিমিত খেতে বলা হয়।
আজকাল অনেকেই শর্করা শূন্য বা জিরো কার্ব বা লো কার্ব খাবারের দিকে ঝুঁকছেন। ইউটিউব, ফেসবুকের কল্যাণে অনেকেই না বুঝে নানা অস্বাস্থ্যকর ডায়েট চর্চা করছেন। আসলে কি শর্করা বাদ দিয়ে ডায়াবেটিসের ওষুধ বাদ দেওয়া সম্ভব?
প্রথম কথা হলো, একটি সুষম খাদ্যাভ্যাসে শর্করার পরিমাণ দৈনিক চাহিদার ৪০-৫০ শতাংশ হওয়ার কথা। শর্করা শরীরের প্রধান জ্বালানি। দৈনন্দিন শক্তির উৎস। শর্করা একেবারে বাদ দিলে শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়ায় জ্বালানির উৎস হিসেবে গ্লুকোজের বদলে চর্বি ভাঙতে শুরু করে। এতে কিটোঅ্যাসিড তৈরি হতে থাকে, যা ক্ষতিকর। তাই জ্বালানির প্রধান উৎস বন্ধের দরকার নেই; বরং দেখতে হবে, কী ধরনের শর্করা খেলে রক্তে গ্লুকোজ বেশি বাড়বে না।
শর্করা মূলত দুই ধরনের। সহজ শর্করা ও জটিল শর্করা। জটিল শর্করায় কার্বন বন্ধন বেশি, ফাইবার বা আঁশ বেশি। তাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। মানে জটিল শর্করা ভেঙে গ্লুকোজ কম শোষিত হয়, রক্তে গ্লুকোজ বেশি বাড়ায় না। আবার সহজ শর্করা দ্রুত ভেঙে গ্লুকোজ অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই সহজ শর্করার বদলে জটিল শর্করা বেছে নিতে হবে। সাদা চিনি, সাদা চাল, সাদা ময়দার তৈরি খাবার, নুডলস, পাস্তা ইত্যাদি হলো সহজ শর্করা। আর লাল চাল, লাল আটা, গোটা শস্য যেমন ওটস, ব্রাউন নুডলস বা ব্রাউন পাস্তা ইত্যাদি জটিল শর্করা। ডায়াবেটিসের রোগীদের শর্করা খেলে এ ধরনের জটিল শর্করা খেতে হবে।
শাকসবজি ও ফলমূলেও কিন্তু চিনি বা শর্করা থাকে। তাহলে ডায়াবেটিসের রোগীরা কি এগুলো খাবেন না? মনে রাখবেন, আলু সবজির মধ্যে পড়ে না। আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশি, প্রায় ভাতের মতো। আলু খেলে গ্লুকোজ বেশি বাড়ে। মজার ব্যাপার হলো, মিষ্টি আলুতে আবার ফাইবার বেশি। ফলে এটি জটিল শর্করা এবং এতে অতটা গ্লুকোজ বাড়ে না।
অনেকের ধারণা, মাটির নিচের সবজিতে গ্লুকোজ বেশি। এই ধারণাও ভুল। যেমন গাজর, মুলা, বিট, কচুমুখী, শালগম ইত্যাদি মাটির নিচের সবজি হলেও এদের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম এবং ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ভালো। বেশির ভাগ সবজির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাঝারি মানের। তাই খেতে কোনো বাধা নেই।
একই কথা প্রযোজ্য ফলমূলের ক্ষেত্রেও। কিছু ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স একটু বেশি, যেমন খেজুর, তরমুজ, আম ইত্যাদি। আর বাকি বেশির ভাগ ফলের জিআই মাঝারি মাত্রার। ফলে শর্করা ছাড়াও থাকে নানা রকম ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও ফাইবার। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা যেকোনো ফলই খেতে পারেন, তবে পরিমিত পরিমাণে।
ডা. তানজিনা হোসেন, অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগ, গ্রিনলাইফ মেডিকেল কলেজ
আগামীকাল পড়ুন: শিশুর অপুষ্টির প্রতিকার কীভাবে