পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) একটি হরমোনজনিত ব্যাধি, যা সাধারণত প্রজননক্ষম নারীদের মধ্যে দেখা যায়। পলি কথাটির অর্থ ‘অনেক’। তাই পলিসিস্টিক মানে হলো অনেকগুলো সিস্ট। এ রোগে নারীর শরীরে প্রয়োজনীয় হরমোনগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। অন্যদিকে, পুরুষ হরমোনের আধিক্য দেখা দেয়।
কেন হয়
পিসিওএসের সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরি অজানা। তবে যেসব কারণ এর পেছনে ভূমিকা রাখে, সেগুলো হলো, পুরুষ যৌন হরমোনের (অ্যান্ড্রোজেন) উচ্চমাত্রা, জেনেটিকস বা পারিবারিক ইতিহাস, ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স এবং ওজন বৃদ্ধি।
অ্যান্ড্রোজেনের প্রভাব
নারীদের ডিম্বাশয় প্রতি মাসে একটি ডিম্বাণু ছেড়ে থাকে। এটি গর্ভদশা চলাকালীন পরিণত হয় নতুবা সাধারণ মাসিক চক্রে নিঃসৃত হয়। কিন্তু অ্যান্ড্রোজেনের আধিক্যে ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। ফলে ডিম্বাশয় থেকে যে ডিম্বাণু বড় হয়ে ডিম বের হওয়ার কথা, তাতে বাধার সৃষ্টি হয় এবং এভাবে একসময় ডিম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। নিয়মিত ঋতুচক্র বাধাগ্রস্ত হয়। বন্ধ্যত্বও দেখা দেয়।
ঝুঁকিতে কারা
মূলত ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। অত্যধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ, কায়িক শ্রমের অভাব ও ওজনাধিক্য এর ঝুঁকি বাড়ায়।
লক্ষণ
অনিয়মিত মাসিক। মাসিকে অল্প রক্ত যাওয়া।
অনাকাঙ্ক্ষিত লোম, যেমন মুখমণ্ডল, স্তন, হাত বা পায়ের পাতায়।
ওজন বাড়তে থাকা। ত্বক অতিরিক্ত তেলতেলে বা ব্রণ হওয়া। চুল পড়া।
শরীরের বিভিন্ন অংশের ত্বক কালো হয়ে যেতে থাকা, যেমন হাত বা স্তনের নিচের ত্বকে, গলার পেছনেরঅংশে, কুচকিতে কালো দাগ।
ঘুমের সমস্যা, বিষণ্নতা। গর্ভধারণে অক্ষমতা।
রোগ নির্ণয়
পিসিওএস নির্ণয়ে একক কোনো পরীক্ষা নেই। অনেকগুলো বিষয় পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। রোগীর তথ্য, পারিবারিক ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা ও ল্যাব পরীক্ষা জরুরি। পিসিওএসের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে ডিম্বাশয় বা অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডে কোনো টিউমার থাকলে। আবার অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড যদি অস্বাভাবিক বড় হয়, তখনো অতিমাত্রায় অ্যান্ড্রোজেন হরমোন নিঃসৃত হতে পারে; যা আসলে পিসিওএস নয়।
তিনটির মধ্যে অন্তত দুটি প্রমাণ পাওয়া গেলে পিসিওএস বলা যায়। ডিম্বপাত না হওয়া, উচ্চমাত্রার অ্যান্ড্রোজেন ও ওভারিয়ান সিস্ট। আল্ট্রাসাউন্ড করে সিস্ট আছে কি না, তা নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা
এ রোগের চিকিৎসা করার আগে অনেক বিষয় বিবেচ্য। রোগী অদূর ভবিষ্যতে সন্তান চান কি না, বয়স কত, অনিয়মিত মাসিক ইত্যাদি অনেক বিষয় মাথায় রাখতে হয়। আবার ওজন, রক্তের শর্করা বা চর্বি, শরীরে অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা কত বেশি, এসবের ওপরও এ রোগের চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ভর করে।
অধ্যাপক ডা. আঞ্জুমান আরা বেগম, স্ত্রীরোগ, প্রসূতিবিদ্যা ও বন্ধ্যত্ব রোগবিশেষজ্ঞ, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ