জরায়ুমুখের ক্যানসার হতে পারে যেসব কারণে

জরায়ুমুখের ক্যানসার নারীদের সব ধরনের ক্যানসারের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এটাই একমাত্র ক্যানসার, যা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা যায় শহর ও গ্রাম—উভয় স্থানে। গ্রামে ভায়া টেস্ট ও শহরে প্যাপস স্মিয়ার, এলবিসি (লিকুইড বেসড সাইটোলজি) বা কলপোস্কপি ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে খুব সহজে এ রোগ প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা সম্ভব।

প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা গেলে এ রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব। এ ক্যানসার প্রাথমিক থেকে প্রাণঘাতী পর্যায়ে রূপান্তরিত হতে ১০ থেকে ১২ বছর লাগে। তাই প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার অনেক আগেই রোগটির সফল চিকিৎসা সম্ভব। এ কারণেই এ রোগ সম্পর্কে নারীদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা দরকার।

জরায়ুমুখ ক্যানসার জীবনের দুটি পর্যায়ে হতে পারে। ৩৫ থেকে ৩৯ বছর ও ৬০ থেকে ৬৯ বছর। এর লক্ষণগুলো হচ্ছে—১. দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, ২. অনিয়মিত মাসিক, ৩. সহবাসের সময় বা পরে রক্তপাত, ৪. মেনোপজের পর রক্তস্রাব, ৫. তলপেটে ব্যথা ইত্যাদি।

যেসব ক্ষেত্রে ঝুঁকি

  • জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে খাওয়া।

  • অল্প বয়সে বিয়ে হওয়া।

  • অল্প বয়সে সন্তান প্রসব।

  • ঘন ঘন ও পাঁচের বেশি সন্তান হওয়া।

  • একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক। এ রোগের পেছনে একধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ দায়ী। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস গোত্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে ১৬, ১৮ সেরোটাইপ। যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়।

শনাক্তকরণ

রোগ হওয়ার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা শনাক্তকরণে স্ক্রিনিং করা যায়। সন্দেহজনক ক্ষেত্রে বায়োপসি ও হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করতে হবে। রোগ শনাক্ত হলে রোগের পর্যায় জানতে পেলভিসের এমআরআই দরকার হতে পারে। টিউমার মার্কার করা যেতে পারে।

চিকিৎসা

চিকিৎসা পদ্ধতি রোগের পর্যায়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রাথমিক পর্যায়ে: প্রথমে অস্ত্রোপচার, পরে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি। অ্যাডভান্সড পর্যায়ে: প্রথমে সিসিআরটি-কেমোরেডিও ও রেডিওথেরাপি। অনেক সময় কেমোথেরাপির পর অস্ত্রোপচারও করা হয়। উল্লেখ্য, দুই ধরনের রেডিওথেরাপি আছে। একটি ইবিআরটি ও অন্যটি আইসিআরটি।

প্রতিরোধ

  • ৯ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত সব সুস্থ মেয়ে ও নারীকে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের টিকা দেওয়া।

  • সুস্থ নারীদের ৩০ বছর বয়স থেকে স্ক্রিনিং করা।

মনে রাখতে হবে, ক্যানসার নির্ণয়ের পর রোগীর যথাযথ চিকিৎসা, দুর্ভোগ কমানো ও সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করা দরকার।

  • ডা. পবিনা আফরোজ: পারভীন স্ত্রীরোগ, প্রসূতি এবং স্ত্রীরোগ ক্যানসার ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন, কনসালট্যান্ট, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর ১০, ঢাকা