চিয়া সিড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে সবচেয়ে বেশি উপকার?
চিয়া সিড ভেজানো পানি পুষ্টিগুণে ভরপুর। বীজটিতে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ নানা স্বাস্থ্যকর উপাদান আছে। এই ‘সুপার ফুড’ ওজন কমানো থেকে শুরু করে ক্যানসার প্রতিরোধের মতো নানা কাজ করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, চিয়া সিড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়?
অনেকে চিয়াবীজ সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। এটিই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। কেউ ভিজিয়ে রাখেন কয়েক ঘণ্টা। অনেকে রাতে ভিজিয়ে রাখতে ভুলে যাওয়ার কারণে হয়তো পরদিন সকালে আর চিয়া-পানি খানই না। আপনি কি এ রকম ভুলোমনাদের দলে? যে দলেই থাকুন, আপনার জন্য আছে সুখবর!
চিয়া সিডে যেসব পুষ্টিগুণ আছে, মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে এর সবই আপনি পাবেন। কিন্তু যদি শুধু চিয়া-পানি না খেয়ে অন্য কোনো রেসিপি বানাতে চান, সে ক্ষেত্রে ঘণ্টা দুয়েক ভিজিয়ে রাখতেই পারেন। কিন্তু সারা রাত? তার কোনো দরকারই নেই।
চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তোকমাদানার মতো। পানি বা দুধে ভিজিয়ে রাখলে এটি নরম ও পিচ্ছিল হয়। ভালোভাবে হজম করার জন্যই মূলত এটি ভিজিয়ে রাখতে হয়। এতে এর পুষ্টিগুণের পুরোটাও আমাদের শরীর শুষে নিতে পারে।
চিয়া সিড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখবেন
এক টেবিল চামচ চিয়া সিড তিন টেবিল চামচ পানি বা দুধে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ধীরে ধীরে নাড়াচাড়া করুন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন। ব্যস, আপনার চিয়া-পানি তৈরি। এত দ্রুত চিয়া সিড নরম হওয়ার জন্য এর দ্রবণীয় আঁশকে ধন্যবাদ জানাতে পারেন। এই চিয়া-পানি আপনি স্মুদি, টকদই বা ওটমিলসহযোগে খেতে পারেন।
আপনি আধঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখলে এটি আরও বেশি পানি শোষণ করবে। তখন বীজগুলো হয়ে উঠবে আরও নরম। চিয়া-পুডিং বা এ ধরনের ঘন কিছু বানিয়ে খেতে চাইলে এটাই এই বীজ ভিজিয়ে রাখার যথার্থ সময়। যদি কেউ কোনো খাবারে ডিমের পরিবর্তে চিয়া ব্যবহার করতে চান, তাঁরা এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। এভাবে ভিজিয়ে রাখলে এর ভেতর থেকে আরও বেশি মিউকাস বের হয়ে থকথকে হবে। কিন্তু পুষ্টিগুণ থাকবে একই।
কেন চিয়া সিড বেশিক্ষণ ধরে ভেজাবেন না
আমরা প্রায়ই দেখি, বেশির ভাগ মানুষ চিয়া সিড রাতভর ভিজিয়ে রেখে সকালে খান। এতে বীজটি বেশি পানি শোষণ করে আরও আঠালো, পিচ্ছিল ও থকথকে হয়। কিন্তু চিয়া সিডের পরিপূর্ণ পুষ্টি পেতে এতক্ষণ ধরে ভিজিয়ে রাখার দরকার নেই।
অনেকক্ষণ চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখা কারও ব্যক্তিগত পছন্দ হতে পারে। বিশেষ করে যাঁরা বেশি ঘন চিয়া-পুডিংয়ের মতো খাবার তৈরি করতে চান। তবে এতে পুষ্টিগুণ বাড়ে না। চিয়া সিডে যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আমিষ ও আঁশ থাকে, তা অল্পক্ষণ ভেজালেও পাওয়া যায়।
শুকনা খেলে কী হবে
শুকনা চিয়া সিড খেলে তা শরীরের হজমনালি থেকে পানি শোষণ করবে। এতে পেটে গ্যাস হয়ে অস্বস্তি তৈরি হতে পারে। হজমেও সমস্যা হয়। তাই চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখতে হয়। এতে পানি শোষণ করে এই বীজের বাইরের অংশ নরম ও পিচ্ছিল হয় এবং হজম হয় সহজে।
চিয়া সিড এর ওজনের চেয়ে ১০ থেকে ১২ গুণ পানি শোষণ করে। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখলেও কিএটি একই পরিমাণ পানি শোষণ করে? এর উত্তর, অবশ্যই করে। ফলে চিয়া সিড অধিক সময় ভিজিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই।
কিছু পরামর্শ
গরম দুধ বা পানি দ্রুতই চিয়া সিডকে তরল করে। ফলে কেউ যদি ১০ মিনিট চিয়া সিড ভিজিয়ে রেখেই কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে চান, তাঁরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
ভিজিয়ে রাখার পর নাড়াচাড়া করুন। নাড়াচাড়া দ্রুত পানি শুষে নিতে সাহায্য করে। ফলে দ্রুত ভিজিয়ে চিয়া সিড খেতে নাড়াচাড়া করতে থাকুন।
১০ থেকে ১২ মিনিট পর চিয়া সিডের দ্রবণ পরীক্ষা করে দেখুন। যদি মনে করেন, দ্রবণ পাতলা বা ঘন হয়েছে, তবে আবার পরিমাণমতো চিয়া সিড/পানি যোগ করুন।
দুধ, বাদাম, ফলের রস বা নারকেলের পানিতেও চিয়া সিড মেশাতে পারেন। ভিন্ন ভিন্ন পানীয়তে চিয়া সিড মেশালে তা ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ দেবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া