করোনার নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত, ঝুঁকি কতখানি
ভারতসহ বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাসের সাবভ্যারিয়েন্ট জেএন.১। চলতি বছরের নভেম্বরের শুরুতে আক্রান্তের হার ছিল প্রায় ৩ শতাংশ। কিন্তু গত এক মাসে বিশ্বব্যাপী এটি ছড়িয়ে পড়ার হার ২৭ দশমিক ১-এ পৌঁছেছে। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
জেএন.১-এর লক্ষণগুলোর সঙ্গে ভাইরাসটির আগের ধরনের উপসর্গগুলোর সাদৃশ্য আছে। যেমন জ্বর, সর্দি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, ইত্যাদি লক্ষ করছেন চিকিৎসকেরা। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, জেএন.১ ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা, যেমন পেটব্যথা ও ডায়রিয়া বেশি চোখে পড়ছে। তবে এর জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টিকার কারণে যে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়, তা দিয়ে জেএন.১ থেকে কতটুকু সুরক্ষা মিলবে, সে ব্যাপারে খুব বেশি প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে আগের ধরনগুলোর চেয়ে এই ধরনে সংক্রমণের কারণে মানুষ অপেক্ষাকৃত বেশি অসুস্থ হচ্ছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঝুঁকিসংক্রান্ত এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বিশেষ করে যেসব দেশে শীত মৌসুম শুরু হচ্ছে, সেখানে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত অন্য সংক্রমণগুলোর পাশাপাশি করোনার এই নতুন ধরনের কারণে সারস-কোভি-২ (করোনাভাইরাস)–এর প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। সংস্থাটি মনে করছে, স্বাস্থ্যের ওপর এ ধরনের প্রভাব নির্ণয়ের জন্য আরও বেশি গবেষণা প্রয়োজন।
জেএন.১ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা আগের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের থেকে অনেকটাই বেশি। কিন্তু এই ভ্যারিয়েন্টের ধার অনেকটাই কম। খুব বেশি যে অসুস্থ করে ফেলতে পারবে করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট, তা নয়।
আগের কয়েকবার যেমন দেখা গেছে প্রচুর মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে, আইসিইউতে দিতে হচ্ছে, এই ভ্যারিয়েন্টে সে রকমটা হওয়ার আশঙ্কা কম।
শুধু বয়স্ক মানুষ বা অন্যান্য রোগে ভুগছেন যাঁরা, তাঁদের ক্ষেত্রে হয়তো হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হলেও হতে পারে।
সংক্রমণ ও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে করণীয়
জনাকীর্ণ ও বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক পরলে করোনা ছাড়াও সর্দি ও কাশি থেকেও নিরাপদ থাকা সহজ হবে।
কাশি বা হাঁচির সময় নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে।
কোভিড ও টিকার নতুন নতুন তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে।
শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করে তুলতে ভিটামিন ডি-এর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে, এই শীতের সময়। দেশের প্রায় ৭০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ভিটামিন ডির স্বল্পতায় ভুগছেন।
সপ্তাহে দুবার ১০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত রোদে বসলে উপকার পাবেন। এ সময় যতটা সম্ভব ছোট হাতার পাতলা কাপড় পরতে হবে, যেন রোদ সরাসরি গায়ে লাগে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত রোদ সবচেয়ে ভালো। মুখে রোদ লাগাতে না চাইলে সূর্যের দিকে পিঠ করে বসতে পারেন। ত্বক খুব বেশি স্পর্শকাতর না হলে সানস্ক্রিন ছাড়া কিছু সময় রোদে বসলে ত্বক বেশি ভিটামিন ডি পাবে। চাইলে সানগ্লাস পরেও রোদে বসা যায়।
এ ছাড়া চর্বিযুক্ত মাছ স্যামন, ম্যাকারল, মাছের তেল, গরুর কলিজা, ডিমের কুসুম, পনির, সয়া, কমলার জুস ইত্যাদিতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তবে খাবারের চেয়ে সময়মতো নিয়ম মেনে সূর্যের আলো গ্রহণ করাই ভালো। কেননা, ক্যালসিয়াম শোষণে ভিটামিন ডি শরীরের জন্য বেশ দরকার, যা বিনা মূল্যে মেলে সূর্যের আলো থেকে।
এসবের বাইরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর সুষম খাবার গ্রহণ করুন। ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
লেখক: অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান: মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি., শ্যামলী, ঢাকা