শিশুর পায়ে ব্যথা মানেই কি বাতজ্বর
শিশুদের প্রায়ই পায়ে ব্যথা করে, বিশেষ করে পায়ের মাংসপেশিতে। বেশি হাঁটলে বা খেলাধুলা করলে ব্যথার জন্য কাঁদেও অনেক শিশু। এমনটা হলে প্রায়ই অনেকে ধরে নেন, এটি বাতজ্বর। অনেক সময় শুরু করা হয় বাতজ্বরের চিকিৎসাও। মনে রাখতে হবে যে বাতজ্বর শনাক্ত করার কিছু ক্রাইটেরিয়া আছে।
বাতজ্বরকে ইংরেজিতে বলে রিউমেটিক ফিভার। এটি একধরনের প্রদাহজনিত রোগ। শিশুদের গলায় স্ট্রেপটোকক্কাস নামের অণুজীবের সংক্রমণের পর শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তা পরে হৃৎপিণ্ড, স্নায়ু, ত্বক, জয়েন্ট ইত্যাদি আক্রমণ করে প্রদাহ সৃষ্টি করে। সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সের শিশুদের এটি বেশি হয়। ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় বসবাস করলে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে স্ট্রেপটোকক্কাস দিয়ে গলাব্যথা বা ফ্যারিনজাইটিস হলে বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করায় বাতজ্বরের প্রকোপ অনেকটা কমে গেছে।
কোনো একক লক্ষণ কিংবা পরীক্ষা দিয়ে এ রোগ নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায় না। রোগনির্ণয়ে যে বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞানীরা ঠিক করেছেন, সেটির নাম ‘জোন্স নির্ণায়ক’ বা পরিবর্তিত জোন্স মানদণ্ড। এ বৈশিষ্ট্যের পাঁচটি মুখ্য ও কিছু গৌণ বৈশিষ্ট্য আছে। সেই সঙ্গে থাকতে হবে স্ট্রেপটোকক্কাস সংক্রমণের প্রমাণ। মুখ্য বৈশিষ্ট্যের যেকোনো দুটি অথবা একটি মুখ্য বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে দুটি গৌণ বৈশিষ্ট্য ও স্ট্রেপটোকক্কাস সংক্রমণের প্রমাণ মিলে গেলে তাকে বাতজ্বর হিসেবে ধরতে হবে।
মুখ্য বৈশিষ্ট্য
হৃৎপিণ্ডের প্রদাহ;
হাত-পায়ের বড় জয়েন্টে প্রদাহ;
বিশেষ ধরনের কাঁপুনি, খিঁচুনি;
ত্বকের লাল দাগ;
ত্বকের নিচে একধরনের গোটা।
এদিকে গৌণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে থাকতে পারে হাত-পায়ে হালকা ব্যথা, জ্বর ও সম্প্রতি সংক্রমণের প্রমাণ হিসেবে গলা পরীক্ষায় জীবাণুর অস্তিত্ব। রক্তে কিছু টাইটার বাড়তি থাকে।
জয়েন্টে প্রদাহ হলে জয়েন্ট ফুলে যায় ও লাল হয়ে যায়। কখনো শুধু ব্যথা থাকতে পারে। কিন্তু পেশিব্যথা সাধারণত বাতজ্বর নয়; বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের এই পায়ে ব্যথার কারণ ‘গ্রোয়িং পেইন’ নামের সাধারণ একটি সমস্যা। শিশুর সারা দিনের দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি ও খেলাধুলা এ জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
সাধারণত ৩ বা ৪ বছর বয়স থেকে শিশুর গ্রোয়িং পেইন শুরু হয় এবং ৮ থেকে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত থাকে। শিশুর গ্রোয়িং পেইন দীর্ঘমেয়াদি কোনো ক্ষতি করে না। গ্রোয়িং পেইনের ব্যথা কমাতে পায়ের মাংসপেশির কিছু ব্যায়াম করতে হবে, পাশাপাশি হালকা গরম সেক দেওয়া যেতে পারে।
এম ইয়াছিন আলী, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি, ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা