শরীরে যে ৫ পরিবর্তন দেখে বুঝবেন আপনি অতিরিক্ত চিনি খাচ্ছেন
চিনি ছাড়া অনেকের জীবন কল্পনা করাই কঠিন। চিনি খাবেন, তবে কতটুকু? আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, নারীরা দিনে ৬ আর পুরুষেরা ৯ চা–চামচ চিনি খেতে পারবেন। এর মানে হলো দিনে ২৫-৩৬ গ্রাম বা প্রায় ১০০-১৫০ ক্যালরি চিনি খাওয়া যেতে পারে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম চিনি খাওয়ার পরামর্শ দেয়। তবে প্রতিদিন ২৫ গ্রামের বেশি ‘অ্যাডেড সুগার (খাবারে যে চিনি যোগ করা হয়)’ খাওয়া উচিত নয়। কেননা আমরা যে চিনি খাই তার বেশির ভাগই অবচেতনভাবে। মিষ্টি, কেক, ফল, প্রক্রিয়াজাত খাবার, পানীয়র সুক্রোজ, ডেক্সট্রোজ, ফ্রুক্টোজ ও কর্ন সিরাপের মাধ্যমে ‘লুকায়িত’ চিনি ঢুকে পড়ে।
চিনি তো আমরা কমবেশি সবাই খাই। কিন্তু আমরা বেশি চিনি খেয়ে ফেলছি কি না, বুঝব কী করে? জার্মানির ডার্মাটোলজিস্ট ও পুষ্টিবিশেষজ্ঞ ডা. লিলা আহলেমান চিনি বেশি খেলে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়, তা জানিয়েছেন।
১. বারবার খিদে লাগে, ওজন বেশি
চিনিতে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে। পাশাপাশি বেশি চিনি খেলে বারবার ক্ষুধা লাগে। কারণ, স্বল্প মেয়াদে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায় চিনি, কিন্তু ফাইবারের অভাবের কারণে এর কোনো স্থায়ী প্রভাব থাকে না। ফলে ‘সুগার স্পাইক’ হয় আর বারবার ক্ষুধা লাগে। পরিণতিতে বেশি বেশি খেয়ে ওজন বাড়িয়ে ফেলি আমরা।
২. ত্বকের স্বাস্থ্য নষ্ট
চিনি খেলে শুধু ইনসুলিনের মাত্রাই বাড়ে না, রক্তে ইনসুলিনের মতো গ্রোথ ফ্যাক্টর-১ বা জিএফ-১ নামে একটি হরমোনও বাড়ে। ইনসুলিন ও জিএফ-১ সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলোকে উদ্দীপ্ত করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ত্বকের প্রোটিন। আর ব্রণসহ বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। তাই ব্রণ দেখা দিলে বুঝতে পারবেন যে আপনি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চিনি খাচ্ছেন।
৩. মুড সুইং, বদমেজাজ
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ার ফলে ইনসুলিন নিঃসরণও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘটে। এটি মাঝেমধ্যে এতটাই শক্তিশালী হয় যে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক স্তর থেকে কমে ন্যূনতম মাত্রার নিচে চলে যায়। তখন আপনার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। তখন ক্ষুধা লাগে আর ‘মুড সুইং’ হয়। ফলে হুট করে রেগে যাওয়া, অল্পতে হতাশ হয়ে পড়া ও মেজাজ হারানোর মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
৪. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া
সাধারণত ক্ষুদ্রান্ত্রের মাধ্যমে চিনি শোষিত হয়। যখন গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজের মতো সাধারণ চিনির পরিমাণ আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের ধারণক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যায়, তখন এই চিনি বৃহদন্ত্রে শোষিত হয়। পুষ্টিবিশেষজ্ঞদের মতে, এই চিনি বৃহদন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হয়ে ওঠে। এর ফলে এন্ডোটক্সিন নামের বিষ উৎপন্ন হয়। এটি লাইপোপলিস্যাকারাইড নামেও পরিচিত। এটি রক্তে প্রবেশ করে নীরব প্রদাহ তৈরি করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থাকে দুর্বল করে। আর শরীরের বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করে।
৫. দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া
এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে বেশি বেশি চিনি খেলে ‘অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন অ্যান্ড প্রোডাক্টস’(এজিইএস) তৈরি হয়। এর ফলে বয়স ৩০-এর পর আমাদের ত্বকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যে ক্ষয় হয়, তা আর পূরণ করে উঠতে পারে না। ফলে মানুষ দ্রুত বুড়িয়ে যেতে থাকে।
সূত্র: ভোগ