মেনোপজের হরমোন থেরাপি কি সবাই নিতে পারবেন 

বিশ্ব মেনোপজ দিবস পালিত হয় ১৮ অক্টোবর। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য, ‘মেনোপজে হরমোন থেরাপি’। মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি নারীর জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক অবস্থা, যখন তাঁদের মাসিক চক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং শরীরে নারীর হরমোন (বিশেষত ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন) উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এটি সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে ঘটে, কারও ক্ষেত্রে আগে-পরে হতে পারে। 

মেনোপজের ক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়, যা উপশম করতে মেনোপজাল হরমোন থেরাপি (এইচআরটি) একটি চিকিৎসাপদ্ধতি। অস্বস্তিকর এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে:  হট ফ্লাশ বা হঠাৎ গরম লাগার অনুভূতি, ঘুমের সমস্যা, মুডের পরিবর্তন, বিষণ্নতা, শুষ্কতা, ওজন বৃদ্ধি, প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি।

মেনোপজের হরমোন থেরাপিতে প্রধানত দুটি হরমোন ব্যবহৃত হয়: 

ইস্ট্রোজেন

এটি শরীরের প্রধান নারী হরমোন। মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়, যা হট ফ্লাশ, রাতের ঘুমের সমস্যা এবং শুষ্কতার মতো উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। ইস্ট্রোজেন থেরাপি এ উপসর্গগুলো উপশমে সহায়তা করে; বিশেষ করে যাঁদের অস্ত্রোপচার করে জরায়ু অপসারণ করা হয়েছে।

প্রোজেস্টেরন

এটি দ্বিতীয় প্রধান নারী হরমোন। যাঁদের জরায়ু আছে, তাঁদের জন্য প্রোজেস্টেরন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি জরায়ুর স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং ইস্ট্রোজেনের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করে। প্রোজেস্টেরন সাধারণত কম্বিনেশন হরমোন থেরাপিতে ব্যবহার করা হয়, যেখানে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের ব্যবহার হয় একসঙ্গে।

হরমোন থেরাপির উপকারিতা

● হট ফ্লাশ ও রাতের ঘুমের সমস্যা কমায়।

● হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে ও অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়। 

● হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়।

ঝুঁকি

● স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে।

● থ্রম্বোসিস বা রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা হতে পারে।

যাঁদের জন্য উপযুক্ত নয়

মেনোপজের হরমোন থেরাপি সব নারীর জন্য উপযুক্ত নয়। কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক ঝুঁকি থাকলে এটি না নেওয়াই ভালো, যেমন:

● স্তন ক্যানসারের ইতিহাস আছে বা বর্তমানে আক্রান্ত কিংবা যাঁদের পারিবারিক ইতিহাসের কারণে ঝুঁকি বেশি। 

● ক্যানসার শরীরের অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়লে। 

● জরায়ুর ক্যানসার আছে বা ছিল। 

● রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা বা ভ্যারিকোজ ভেইনসের ইতিহাস থাকলে। 

● হৃদ্‌রোগের ইতিহাস থাকলে। 

● লিভারের সমস্যা আছে। 

● হরমোন ওষুধের উপাদানগুলোর প্রতি গুরুতর অ্যালার্জি থাকলে। 

হরমোন থেরাপি শুরুর আগে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে।


ডা. শারমিন আব্বাসি স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ