আঘাত, ক্ষয় ও বাতজনিত—এ তিন কারণে হতে পারে হাঁটুর জয়েন্ট বা সন্ধিতে ব্যথা। আঘাত ও বাতজনিত ব্যথা যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে ক্ষয়জনিত ব্যথা ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। একে বলে অস্টিওআর্থ্রাইটিস।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস প্রতিরোধের জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হাঁটুর সন্ধির মধ্যে যে কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি থাকে, সেখানে ক্ষয় দেখা দিলে এটি হয়। এ ধরনের সমস্যায় হাঁটুতে ব্যথা থাকার পাশাপাশি হাঁটু ফুলতে পারে। ভাঁজ করতে সমস্যা হয়। কখনো হাঁটুর তাপমাত্রা বেড়ে যায়। হাঁটুর আকৃতির পরিবর্তন হতে পারে, হাঁটু ভাঁজ করতে গেলে শব্দ হয়। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর উঠে দাঁড়ালে, সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময়, অনেকক্ষণ হাঁটা-চলার পর ব্যথা বাড়ে। এরপর ধীরে ধীরে তীব্রতা বেড়ে এমন পর্যায়ে যায় যে রোগীর বিশ্রামের সময়ও ব্যথা হতে থাকে।
এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস শরীরের অন্যান্য সন্ধিতেও হতে পারে, কিন্তু হাঁটুর সন্ধিতে বেশি হয়ে থাকে। কারণ, আমাদের শরীরে ওজনের সবচেয়ে বেশি ভার পড়ে হাঁটুতে।
সতর্কতা
অস্টিওআর্থ্রাইটিসে অনেক রকমের জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা আছে। যেমন প্রচলিত ওষুধে কাজ না হওয়া, জয়েন্ট স্টিফ বা সন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া, হাঁটুতে ফ্লুইড জমে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া, হাঁটুর আকৃতির পরিবর্তন হয়ে যাওয়া।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস প্রতিরোধের জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসক রোগীকে জীবনাচরণ পরিবর্তন, ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাসের গাইডলাইন দেন, সেগুলো অবশ্যই মেনে চলা উচিত। এতে রোগ আর বাড়বে না।
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-যুক্ত খাবার খাওয়া, হাঁটু ভাঁজ করে কোনো কাজ না করা, সিঁড়ি ওঠা-নামার সময় সতর্ক থাকা, হাই কমোড ব্যবহার করা, চেয়ারে বসে নামাজ পড়া ইত্যাদি মেনে চলতে হবে।
হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসে প্রয়োজনে অস্ত্রোপচারও করা লাগতে পারে। এর মধ্যে হাঁটুর রিপ্লেসমেন্ট বা প্রতিস্থাপন অন্যতম। তবে এ অস্ত্রোপচার বেশ ব্যয়বহুল।
ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ব্যবহার করা হয়, কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনা করতে হবে। যেমন রোগীর কিডনির সমস্যা, অ্যাজমা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে কি না, তা জেনে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র দিতে হবে।
হাঁটুর সন্ধিতে ব্যথার চিকিৎসায় স্টেরয়েড ইনজেকশন অহরহ দেওয়া হয়। এটি একটু জেনেবুঝে দেওয়া উচিত। প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপি দিতে হবে।
অধ্যাপক ডা. মু. নজরুল ইসলাম, বিভাগীয় প্রধান, অর্থোপেডিক বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা