এ সময় চিকেন পক্স বা জলবসন্ত একটি পরিচিত ও ছোঁয়াচে রোগ। ভ্যারিসেলা জস্টার নামের ভাইরাস থেকে এই রোগ হয়। নবজাতক ও ক্ষেত্রবিশেষ প্রাপ্তবয়স্করা আক্রান্ত হলে রোগটির তীব্রতা বেশি হয়। এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে। এমনিতে রোগটি নিজে নিজেই সেরে যায়। তবে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সুপ্তাবস্থায় থেকে যায় এবং আবার সক্রিয় হয়ে হারপিস জাস্টার রোগের সৃষ্টি করে।
কীভাবে ছড়ায়
আক্রান্ত শিশু বা ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে, আক্রান্ত শিশুর থুতু, হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে এবং তাদের ব্যবহৃত সামগ্রীর মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে ছড়ায়। গর্ভবতী মা প্রথম তিন মাসের মধ্যে আক্রান্ত হলে গর্ভের শিশুও আক্রান্ত হতে পারে। শিশু প্রসব হওয়ার এক সপ্তাহ আগে ও পরে মা আক্রান্ত হলে নবজাতকের জলবসন্ত হতে পারে।
১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত রোগটি মানবদেহে সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
জলবসন্ত হলে কী করবেন
কুসুম গরম তরল খাবারসহ স্বাভাবিক যেকোনো খাবার খাওয়া ভালো।
গায়ে ব্যথা ও জ্বর হলে প্যারাসিটামল সিরাপ দেওয়া যেতে পারে।
চুলকানি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ বা ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করতে হবে।
মুখগহ্বর পরিষ্কার রাখতে হবে। ত্বকে সংক্রমণ দেখা দিলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।
লক্ষণ
সাধারণত ২-৮ বছরের শিশুদের বেশি হয়। প্রথম দিকে জ্বর ১০০-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠে। ক্লান্তি, মাথাব্যথা, অরুচি, বমি ভাব হয়। তবে এক বছরের নিচের শিশুদের প্রাথমিক এসব লক্ষণ সাধারণত দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে ত্বকে প্রথম দিনেই লালচে দাগ বা দানা দেখা যেতে পারে। দানাগুলো প্রথম দিকে লালচে, পরে পানিপূর্ণ হয়ে তিন-চার দিন থাকে। ত্বকের সংক্রমণ মাথা ও মুখমণ্ডল থেকে বিভিন্ন স্থান যেমন পেট, হাত, পা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। বেশ চুলকানি হয়। দানা মুখগহ্বর, জিব ও চোখে দেখা যেতে পারে।
জলবসন্তের টিকা দেওয়া থাকলে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে ওয়াইল্ড টাইপের ভাইরাসের মাধ্যমে আক্রান্ত হলে টিকা দেওয়া থাকলেও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে তীব্রতা কম হয়।
জটিলতা
ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ।
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া।
স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণ—এনকেফালাইটিস, সেরেবেলার অ্যাটাক্সিয়া।
গর্ভজাত শিশুর স্নায়ুতন্ত্র, চোখ, হাত, পা ও চামড়ার গঠন ত্রুটিপূর্ণ এমনকি মৃত শিশু জন্ম।
প্রতিরোধ
জলবসন্ত ছোঁয়াচে রোগ বলে আক্রান্ত শিশুদের অন্যদের কাছ থেকে আলাদা রাখতে হবে। টিকা দিয়ে এ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। ৯ মাস বয়সের পর থেকেই এই টিকা দেওয়া যায়। ১২ বছর পর্যন্ত এক ডোজ ও ১২ বছরের বেশি হলে দুই ডোজ (দুই সপ্তাহের ব্যবধানে) দিতে হয়।
অধ্যাপক ডা. ইমনুল ইসলাম শিশুরোগবিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা