ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার কীভাবে সম্ভব
আমরা অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে নানা ধরনের ওষুধ সেবন করি। যেকোনো ওষুধের প্রত্যাশিত কার্যকারিতা ছাড়াও ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি আছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে এডিআর (অ্যাডভার্স ড্রাগ রিঅ্যাকশনস)। চিকিৎসা করতে গিয়ে কীভাবে এই ওষুধের অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানো যায়, সে ব্যাপারে চিকিৎসক-রোগী সবারই পর্যাপ্ত জ্ঞান ও সচেতনতা জরুরি।
ওষুধের ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানোর জন্য প্রথমেই আমাদের ওষুধের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। রোগীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে নিরাপদ, কার্যকর, সহজলভ্য এবং অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে নির্দেশ করার নামই হলো ওষুধের যৌক্তিক ব্যবহার। এ ছাড়া সঠিক রোগে সঠিক ওষুধ সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করাকেও ওষুধের যৌক্তিক ব্যবহার বলে। ওষুধবিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ওষুধের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
দ্বিতীয়ত, বাজারে আগত নতুন ওষুধের সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিকগুলো আমাদের বেশির ভাগের কাছেই অজানা থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন ধরনের গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ওষুধ বাজারে আসে। গবেষণার ফলাফল থেকে যেকোনো নতুন ওষুধের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন ওষুধের ব্যবহার যত বাড়ে, বাকি ক্ষতিকর দিকগুলোও ধীরে ধীরে জানা যায়। তাই নতুন ওষুধ লেখা ও সেবনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আরও বেশি সতর্ক ও ধীরগতি অবলম্বন করা উচিত।
আমাদের দেশের অনেক রোগীই জ্বর বা অন্যান্য অসুস্থতায় নিজে নিজেই ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিকসহ নানা ওষুধ কিনে খান। ওষুধের ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকা এবং রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এভাবে নিজে নিজে বা হাতুড়ে ডাক্তারের কথায় ওষুধ সেবন করাও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। আমাদেরকে এ ধরনের অজ্ঞতাপ্রসূত স্বচিকিৎসা থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকা উচিত।
এ ছাড়া ওষুধের ক্ষতিকর দিক কমানোর জন্য ওষুধের ছোট–বড় সব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া চিহ্নিতকরণ এবং কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে ইয়োলো কার্ড সংগ্রহ করে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো আমরা ব্যক্তিগতভাবে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সহজেই রিপোর্ট করতে পারি। চিকৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট, প্যারামেডিক, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীসহ রোগী নিজেও এই রিপোর্ট করতে পারবেন। এডিআর রিপোর্টিং–সম্পর্কিত ট্রেনিং ও সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশে এডিআর রিপোটিং অনেক কম হয়। তাই অন্তত হাসপাতালগুলোতে এডিআর রিপোর্টিংয়ের ওপর যথেষ্ট প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ওষুধের বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত একটি রিপোর্ট আগামীতে হাজারো মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে।
ওষুধের গুণাগুণ, কার্যকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া–সম্পর্কিত নিরপেক্ষ ও বিশ্বস্ত তথ্য পাওয়ার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন তথ্যবই রয়েছে। বাংলাদেশেও ওষুধের গুণাগুণ, কার্যকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানার জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত বিডিএনএফ নামের একটি ড্রাগ ফরমুলারি বই আছে, যেখানে আমাদের দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত সব ওষুধের সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য পাওয়া যায়। ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিডিএনএফ বইটির বহুল প্রচার ও ব্যবহার করা উচিত।
ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা