‘স্লিপ ডিভোর্স’ কেন জরুরি? কেন ক্ষতিকর?
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে এক বিছানায় ঘুমাবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে অনেক সময় নানা কারণে দম্পতিদের বিছানা আলাদা হয়ে যায়। তাঁরা আলাদা ঘুমান। এটাই স্লিপ ডিভোর্স। কেন জরুরি এই ঘুম-বিচ্ছেদ? এতে কী কোনো উপকার আছে? ‘ভোগ’ অনুসারে জেনে নেওয়া যাক।
১. ঘুমের ‘মান’ বাড়ায়
জাপানিদের দেখবেন ছোট ছোট বিছানা। বিছানা দেখেই বোঝা যায়, একা ঘুমানো তাঁদের ঐতিহ্য। ঐতিহাসিক আর সাংস্কৃতিকভাবেই জাপানিরা সাধারণত একা ঘুমান। ঘুম তাঁদের জন্য খুবই জরুরি। কোনো কিছুর জন্যই তাঁরা ঘুমের মান বিসর্জন দিতে প্রস্তুত নন। অনেকেই জীবনসঙ্গীর নাকডাকা, নড়াচড়া, উঠে বারবার ওয়াশরুমে যাওয়া অথবা ফ্যান বা এসি চলবে কি চলবে না—সেই সিদ্ধান্তে একমত হতে না পারা, ভিন্ন ঘুমের অভ্যাস—এ রকম নানা কারণে আলাদা ঘুমান। তাতে নিজেদের ঘুম ভালো হয়। কেননা সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম খুবই জরুরি।
২. দূরত্ব কমিয়ে আনে
শুনতে অবাক শোনালেও বাস্তবতা হলো, আপনার জীবনসঙ্গীর সঙ্গে মনোমালিন্য হলে মনোবিদেরা কয়েক দিন আলাদা ঘুমানোর পরামর্শ দেন। সহজেই আপনি এতে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সংঘাতের মানসিক যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
৩. কাস্টমাইজড স্পেস
একেকজনের ঘুমের অভ্যাস একেক রকম। কেউ আলো জ্বালিয়ে ঘুমান, কেউ আলো মোটেই সহ্য করতে পারে না। কেউ এসি ছেড়ে ঠান্ডায় কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমায়, কারও কারও আবার এসি ‘সহ্য’ হয় না। কারও কারও ঘুম খুবই পাতলা। ফলে নিজের মতো করে ঘুমের একটা পরিবেশ তৈরি করেন।
৪. সন্তানের জন্য
শিশুর জন্য অন্তত দুই বছর পর্যন্ত (যতকাল বুকের দুধ খায়) মায়ের কাছে ঘুমানো খুবই জরুরি। বুকের দুধ খাওয়ার পাশাপাশি মায়ের কোল, মায়ের পাশে ঘুমানো, মায়ের ‘ওম’-এ থাকা খুবই জরুরি। নানা কারণে বারবার বাবু ঘুম থেকে উঠে যাওয়ায় জীবনসঙ্গীর ঘুমের অসুবিধার কারণেও অনেক সময় স্লিপ ডিভোর্স হয়। জীবনসঙ্গী আলাদা ঘুমান।
তবে নতুন মায়ের এমন সংকটের সময় শিশুর বাবার উচিত দায়িত্ব যতটা সম্ভব ভাগাভাগি করে নেওয়া। ন্যাপি, কাঁথা বদলে দেওয়া। কোলে নিয়ে ঘুরে ঘুরে ঘুম পাড়ানো। তবে একেবারেই যদি তিনি কোনো সাহায্য না করতে পারেন, তাহলে আলাদা ঘুমানোই সমীচীন। তাঁর বদলে এমন কেউ নতুন মায়ের পাশে থাকল, যে তাঁকে সাহায্য করতে পারে। যাতে নতুন মা আরাম করে খানিকটা ঘুমাতে পারেন।
৫. সার্বিক সুস্থতা, স্বস্তি
অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী আলাদা ঘুমানোর ফলে তাঁদের ঘুম ভালো হওয়া, নিজেদের স্বাস্থ্য ভালো থাকা, সারা দিন এনার্জি নিয়ে পার করা থেকে শুরু করে নিজেদের সম্পর্কে ভারসাম্য রাখাও সহজ হয়। জীবনসঙ্গী চাইলে গভীর রাত পর্যন্ত নিজের পেশাগত দায়িত্ব বা ব্যক্তিগত কাজ করতে পারেন। আরেকজনের তাতে কোনো সমস্যা হয় না।
স্লিপ ডিভোর্সের দরকার আছে। তবে জীবনসঙ্গীকে নিয়ে যদি একসঙ্গে আরামে ঘুমানো যায়, সেটাই সবচেয়ে ভালো। সম্পর্কের গভীরতার জন্য শারীরিকভাবে কাছাকাছি থাকার কোনো বিকল্প নেই। ঘুমবিশেষজ্ঞ ও মনোবিদ ডা. ওয়েন্ডি ট্রক্সেল একই বিষয়ে সিএনএনের একটা প্রতিবেদনে বলেন, ‘জীবনসঙ্গীর সঙ্গে ঘুমানো দুজনকেই সম্পর্কে গভীর নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়। এ ছাড়া ঘুমের আগে আলিঙ্গন করা, যৌন সম্পর্ক বা হালকা গল্প করা, চুমু খাওয়া—এসবের ফলে হ্যাপি হরমোনের নিঃসরণ হয়। আর তা অনেকক্ষণ পর্যন্ত শরীরে থাকে। ফলে ঘুমের মানও ভালো হয়।’
এই মনোবিদ আরও জানিয়েছেন, আলাদা ঘুমানোর ফলে সম্পর্কে ছন্দপতন ঘটে। ভুল-বোঝাবুঝির আশঙ্কা তৈরি হয় বেশি। এমনকি একে অপরকে অকারণে সন্দেহ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় সহজেই। তাই কী কারণে আলাদা ঘুমানোর প্রয়োজন, সেটা আগে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক। আলাদা ঘুমানোটা এরপরের ধাপের বিকল্প।