বয়স ত্রিশের পর গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নাকি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
সন্ধ্যায় অফিস থেকে এসে হাত–মুখ ধুয়ে আরাম করে সোফায় বসলেন মাহবুব আলম। কফি বানিয়ে তাঁর হাতে দিলেন স্ত্রী। কফিতে এক-দুই চুমুক দিতেই কেমন একটা অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন। বুকে ব্যথার পাশাপাশি প্রচুর ঘাম হতে শুরু করল। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা ভেবে খুব একটা পাত্তা দিতে চাইলেন না। তবে তাঁর স্ত্রীর সন্দেহ, এটি গ্যাসের ব্যথা না-ও হতে পারে। ‘আরে, আমার বয়স মাত্রই তিরিশ পেরিয়েছে। এখনই হার্ট অ্যাটাক হতে যাবে কেন!’ এককথায় স্ত্রীর সন্দেহ উড়িয়ে দিতে চাইলেন মাহবুব আলম। তারপরও স্ত্রীর পীড়াপীড়িতে হাসপাতালে যেতে হলো। ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি) করে দেখা গেল, সত্যিই তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন।
আমাদের চারপাশে এমনটা ঘটতে দেখা যাচ্ছে অহরহ। খুব অল্প বয়সেই অনেকে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছেন। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বয়স ত্রিশের পর যেসব ব্যথাকে গ্যাস্ট্রিকের বলে মনে করা হয়, তার অর্ধেকই মূলত হার্ট অ্যাটাক।
তারুণ্যে হার্ট অ্যাটাক
হার্ট অ্যাটাক মানেই বয়স্কদের ব্যাপার, এমনটাই প্রচলিত ধারণা। কিন্তু দৃশ্যপট এখন বদলাচ্ছে। বিশ্বজুড়েই তরুণদের ভেতর হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়ছে। ৩০ বছরের আশপাশের বয়সীদের আজকাল প্রায়ই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। ফলে সচেতন হওয়া জরুরি। যেকোনো বুকের ব্যথাকেই গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা মনে করে অবহেলা করার সুযোগ নেই; বরং তুলনামূলক অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাক কেন হয় এবং এর ঝুঁকিগুলো কী—এসব বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখতে হবে।
জেনে রাখুন ৩০ বছরে হার্ট অ্যাটাকের কারণ
তরুণ বয়সে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কতগুলো স্পষ্ট কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন একটি বড় কারণ। পাশাপাশি এমন কিছু স্বাস্থ্যগত জটিলতা আছে, যেগুলো কারও ভেতর থাকলে তিনি সহজেই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হতে পারেন। যেমন—
বংশগত: মা–বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনের হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব ইতিহাস থাকলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে অধিকতর সচেতনতা জরুরি।
ডায়াবেটিস: আপনার বয়স কত কম বা বেশি, সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আপনি অন্যদের চেয়ে দুই থেকে চার গুণ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
অতিরিক্ত ওজন: অনেক তরুণই আজকাল এ সমস্যায় ভুগছেন। অতিরিক্ত শারীরিক ওজন ও স্থূলতা নানা রকম স্বাস্থ্যগত জটিলতা তৈরি করে, যা একপর্যায়ে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
উচ্চ রক্তচাপ: যেকোনো ধরনের হৃদ্রোগের অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। তরুণদের ভেতর হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা। উচ্চ রক্তচাপ হৃৎপিণ্ডের পেশিকে ঘন করে দেয় এবং রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে বেড়ে যায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।
ধূমপান ও ভ্যাপ: ধূমপান হার্ট অ্যাটাকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তরুণদের ভেতর ধূমপানের প্রবণতা বেশি। স্বাভাবিকভাবেই একজন অধূমপায়ীর চেয়ে ধূমপায়ীর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বেশি। অনেকে আবার সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ভ্যাপ নিয়ে থাকেন এবং মনে করেন, এতে ক্ষতিকর ব্যাপার নেই বা থাকলেও কম। কিন্তু বিষয়টি মোটেও সে রকম নয়। ভ্যাপ বা ই-সিগারেটের ভেতর থাকা নিকোটিন ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ হৃদ্ গতিকে বাড়িয়ে দেয়। উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা আছে। ফলে ভ্যাপ গ্রহণকারীও হতে পারেন হার্ট অ্যাটাকের শিকার।
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: এটি তরুণদের ভেতর প্রবলভাবে দেখা যায়। খাবারে অনিয়ম, ঠিকমতো না ঘুমানো, টানা পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, হতাশা, মাদকাসক্তি ইত্যাদি কারণে অল্প বয়সেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।