জন্মের ৭ দিনের মধ্যেই কেন থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করা জরুরি?

হাসিখুশি প্রাণবন্ত শিশু একটি পরিবারের প্রাণভোমরা। বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তার বুদ্ধিদীপ্ত আচার-আচরণে মা-বাবাকে আনন্দিত করে। অন্যদিকে আচরণে বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি প্রকাশ পেলে অভিভাবকেরা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিতও হয়ে পড়েন। শিশুর বুদ্ধিমত্তা বড়দের মতো হবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একটি সুস্থ-স্বাভাবিক শিশু তার বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করবে, একসময় বুদ্ধি বা মাথা খাটানোর কাজেও একটু একটু করে পারদর্শী হয়ে উঠবে। বিপত্তি বাধে তখনই, যখন এই স্বাভাবিকতার ব্যত্যয় ঘটে।

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য এই থাইরয়েড হরমোন খুবই জরুরি
ছবি: পেক্সেলস

বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে থাইরয়েড হরমোনের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য এই হরমোন খুবই জরুরি। কারও যদি শৈশবে থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি থাকে, তাহলে তার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। মানসিক দিক থেকে সে আর কখনোই পূর্ণাঙ্গরূপে বিকশিত হতে পারবে না। তাই হরমোনের ঘাটতি থেকে থাকলে দ্রুততম সময়ে তা নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. তাসনুভা খান।

নানা কারণেই একটি শিশু থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি নিয়ে জন্মাতে পারে। এই যেমন, গর্ভাবস্থায় মায়ের আয়োডিনের অভাব থাকার কারণে গর্ভের শিশুর থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি হতে পারে। এ ছাড়া মায়ের থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতির কারণে কিংবা নবজাতকের থাইরয়েড গ্রন্থি বা এর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য গ্রন্থির কিছু অস্বাভাবিকতার কারণে নবজাতকের থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি হতে পারে। তাই মায়ের যদি আগে থেকে থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি থেকে থাকে, তাহলে নবজাতকের জন্য এই হরমোন পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। আর নবজাতকের জন্ডিস হলেও অবশ্যই তার থাইরয়েড হরমোনের পরীক্ষা করতে হবে। কিন্তু মুশকিল হলো নবজাতকের থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি থাকলে সেটির কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে। যত দিনে তার আপনজনেরা আবিষ্কার করেন যে শিশুটি আর দশটা স্বাভাবিক শিশুর চেয়ে আলাদা, তত দিনে অনেক দেরি হয়ে যায়।

মায়ের যদি আগে থেকে থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি থেকে থাকে, তাহলে নবজাতকের জন্য এই হরমোন পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি
ছবি: পেক্সেলস

সেই সময় চিকিৎসা করানো শুরু করলেও তার মস্তিষ্কের প্রথম বিকাশের বাধাটি আর দূর করার সুযোগ থাকে না। কারণ, নির্দিষ্ট বয়সে মস্তিষ্কের বিকাশ কতটা হবে, তা পুরোপুরি নির্দিষ্ট। বিকাশের সেই গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোকে যেমন আর ফিরিয়ে আনা যায় না, তেমনি শিশুর মস্তিষ্কের ‘পিছিয়ে পড়া’টাকে আর কোনো অবস্থাতেই ‘এগিয়ে আনা’র সুযোগ পাওয়া যায় না। ফলে শিশুর বুদ্ধিমত্তা থেকে যায় স্বাভাবিকের চেয়ে কম। যে শিশু অমিত সম্ভাবনা নিয়ে জন্মেছিল, সেই সম্ভাবনার অকালমৃত্যু হতে পারে কেবল এই গুরুত্বপূর্ণ হরমোনটির অস্বাভাবিকতার জন্যই।

উন্নত দেশে জন্মের প্রথম ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই গোড়ালি থেকে রক্ত নিয়ে থাইরয়েড হরমোনের স্ক্রিনিং পরীক্ষা করানো হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের সর্বজনীন ব্যবস্থা না থাকলেও পাঁচ থেকে সাত দিনের ভেতর শিরা থেকে রক্ত নিয়ে তা থেকে থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করানো যায়। তবে নবজাতকের অন্য কোনো অসুস্থতা থেকে থাকলে অবশ্য সাত দিন পেরোনোর পর পরীক্ষা করাতে হয়। এ ক্ষেত্রে আগেভাগে পরীক্ষা করালে সঠিক ফল না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই অনেক ক্ষেত্রে শিশুটির সুস্থ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।