বয়স বাড়লেই কী শরীর অকেজো হয়ে যাবে
বয়স বেড়ে চলে তার নিজের নিয়মে। চাইলেও তা আটকে রাখা সম্ভব নয়। বয়সের হাত ধরে শরীর ও মনে দেখা দেয় নানা পরিবর্তন। বেড়ে যায় অনেক রোগ বা শারীরিক সমস্যা। কিছু রোগ আছে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলজনিত সমস্যা, হার্ট ব্লকের সমস্যা, স্ট্রোক ইত্যাদি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। ডায়াবেটিস যদিও অল্প বয়সেও হতে পারে, তবে টাইপ টু ডায়াবেটিস কিন্তু বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়। বয়স ৫০ বা আশপাশে গেলেই শরীরের হাড়ের নানা জটিলতা শুরু হয়। এর ভেতর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সমস্যা হচ্ছে অস্টিওআথ্রাইটিস। এই সমস্যায় অল্প পরিশ্রমেই মেরুদণ্ড বা হাঁটুর ব্যথা কাবু করে ফেলতে পারে। কিছু কিছু ক্যানসার আছে, একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরই যা বেশি দেখা যায় (ফুসফুস, প্রোস্টেট, জরায়ু ইত্যাদি)। বয়স বাড়তে শুরু করলে চোখে দেখা দিতে পারে ছানিজনিত সমস্যা, যাকে বলে ক্যাটারাক্ট। এই রোগে চোখের লেন্স ঘোলা হয়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। আর ৪০–এর পরে তো চোখে চালশে হতেই পারে, যাতে কাছের জিনিস দেখতে বেশ অসুবিধা হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়স ৫০ পেরুলেই প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধি ঘটতে পারে, হতে পারে প্রস্রাবের নানা সমস্যা। আবার মহিলারা এই বয়সে মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তির সম্মুখীন হন, আর সেই সঙ্গে কিছু সমস্যাও কাবু করে ফেলতে পারে। যেমন হঠাৎ কান–মাথা গরম হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত গরম বা ঘাম, অস্থিরতা, খিটখিটে মেজাজ, ওজন বৃদ্ধি, হাড়ের সমস্যা—এগুলো তো আছেই।
এক বিশেষ রকমের স্নায়ুরোগ, যার নাম পারকিনসন্স ডিজিজ, এটিও একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরই দেখা দিতে পারে। এই রোগের কারণে কাঁপুনি, হাঁটাচলায় ভারসাম্যহীনতা, কাজকর্মে ধীরভাবসহ আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বয়সের কারণে কমে যেতে পারে স্মৃতিশক্তি, যাকে বলা হয় ডিমেনশিয়া। ডিমেনশিয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে আলঝেইমার ডিজিজ, এটিও প্রবীণদেরই রোগ। বয়স্ক ব্যক্তিদের মানসিক সমস্যা হতে পারে নানা রকম। বিষণ্নতা, অবসন্নতা, অস্থিরতা, মনোযোগে সমস্যা, অকারণ ভীতি, হতাশা ইত্যাদি। বয়সজনিত নানা রোগে বিষণ্নতা বাসা বাঁধতে পারে। আরও কিছু জটিলতা, যেগুলো ঠিক কোনো রোগের মধ্যে পড়ে না, একটা বয়সের পর হতে পারে। যেমন ওজন বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাব আটকে রাখার ক্ষমতা কমে যাওয়া, হজমের সমস্যা, ঘুম কমে যাওয়া ইত্যাদি।
তবে বয়স হলেই যে রোগাক্রান্ত হতে হবে, তা কিন্তু ঠিক নয়। এমন অনেকেই আছেন, বয়সজনিত সমস্যা তাঁদের তেমন কাবু করতে পারে না। সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপন, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে বয়স বাড়লেও বয়সজনিত অনেক রোগ বা সমস্যার হাত থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।