নারীদের বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) বা মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ খুব পরিচিত একটি সমস্যা। মূত্রতন্ত্রের কোনো অংশে জীবাণুর সংক্রমণ হলে তাকে ইউটিআই বলা হয়। সাধারণত গর্ভাবস্থায় ২ থেকে ১০ শতাংশ নারী এই সংক্রমণে ভুগে থাকেন।
সংক্রমণের কারণ কী
গর্ভাবস্থায় প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মূত্রনালির পেশি শিথিল হয়ে যায়, যার প্রভাবে মূত্রপ্রবাহ ধীর হয়ে মূত্রাশয় ঠিকমতো খালি হতে পারে না, ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
ক্রমবর্ধমান জরায়ু মূত্রাশয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যেটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
এ সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও কমে যায়, যার কারণে মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণসহ অন্যান্য সংক্রমণ বেশি হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে কারও কারও ক্ষেত্রে এই সমস্যা হতে পারে।
উপসর্গ কী
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া;
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া;
তলপেটে ব্যথা;
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর;
বমি ভাব;
প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি।
চিকিৎসা
লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ সময় রক্ত ও প্রস্রাবের পরীক্ষা করানোর পাশাপাশি উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা লাগতে পারে। মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় সব ওষুধ নিরাপদ নয়। তাই অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন, নিজে নিজে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।
প্রস্রাবের সংক্রমণ কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। কেননা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি রক্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া প্রিটার্ম লেবার বা গর্ভের সন্তান সময়ের আগে প্রসব হওয়া, কম ওজনের বাচ্চা হওয়াসহ নানা জটিলতা হতে পারে।
সতর্কতা
প্রস্রাবের ইনফেকশন সব সময় প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও কিছু নিয়ম মেনে চললে সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনা যায়।
প্রতিদিন কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে হবে;
দীর্ঘ সময় প্রস্রাব আটকে রাখা যাবে না;
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। টয়লেট টিস্যু ব্যবহারের সময় সামনে থেকে পেছনের দিকে পরিষ্কার করতে হবে, যাতে জীবাণু মূত্রনালিতে না চলে আসে;
ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান, সুতি অন্তর্বাস ব্যবহার, নিয়মিত গোসল;
ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
ডা. ইসরাত জাবীন, সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ