নিয়মিত সাইক্লিংয়ের এই উপকারিতাগুলো জানতেন?
শহুরে মানুষের হাঁটাচলা কমে গেছে। যান্ত্রিক জীবনে শারীরিক পরিশ্রমও খুব একটা হয়ে ওঠে না। এতে ফিটনেস নষ্ট হয়ে শরীরে বাসা বাঁধছে দীর্ঘমেয়াদি নানা অসুখ। তাই এই কর্মব্যস্ত যুগে আমাদের ফিটনেস ঠিক রাখতে সাইক্লিং হতে পারে অন্যতম সমাধান। পরিবেশবান্ধব বাহন চালানোর আছে নানা উপকারিতা। চলুন জেনে নিই।
শারীরিক ও মানসিক—উভয় দিক থেকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে সাইক্লিং। প্রতিদিন তিন কিলোমিটার সাইকেল চালালে মানুষের শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে ধীরগতির সাইক্লিং করলে শরীরের চর্বি পুড়ে। এতে সহনশীল মনোভাব বাড়ে, শরীরের শক্তি ও বিপাকক্রিয়া উন্নত হয়।
সাইকেল চালালে স্থূলতা হ্রাস পায়। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
সাইক্লিং করলে শ্বাসের সঙ্গে প্রায় ১০ গুণ বেশি অক্সিজেন ফুসফুসে যায়। ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
সাইক্লিংয়ের ফলে শরীরের নিচের অংশের পেশি যেমন ঊরুর পেশি, নিতম্বের পেশিসহ পায়ের পেশিগুলো আরও শক্তিশালী হয়।
নিয়মিত সাইক্লিং করলে উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস ইত্যাদি প্রতিরোধ করা যায়।
রক্তের কোলেস্টেরল নিরাপদ মাত্রায় নিয়ে আসে সাইক্লিং। ফলে হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালি সুস্থ থাকে। স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। সপ্তাহে ২০ মাইল সাইক্লিং করলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়।
সাইক্লিংয়ের ফলে পেটের গ্যাসভাব ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং অন্ত্রের ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
সাইক্লিং পুরুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা বাড়ায়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা মতে, ৫০ বয়সের ঊর্ধ্ব যেসব পুরুষ সপ্তাহে অন্তত ৩ ঘণ্টা সাইক্লিং করেন, তাঁদের যৌন অক্ষমতার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমে যায়।
নারীদের জন্য সাইক্লিং খুবই উপকারী। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত সাইক্লিং করলে শরীর রোগা পাতলা ও সুস্থ থাকে, যা স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি ৩৪ শতাংশ কমাতে পারে। এ ছাড়া স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাইক্লিং করে সক্রিয় জীবন যাপন করলে তা ক্যানসার চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে ও সার্বিক জীবনমান বাড়াতে সাহায্য করে।
নিয়মিত সাইক্লিং মস্তিষ্কের করটেক্স অঞ্চলে নতুন নতুন স্নায়ুকোষীয় সংযোগ ঘটায়। ফলে মনোযোগ ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
সাইক্লিংয়ের ফলে মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে। বৃদ্ধ বয়সে যা আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অন্তত ১০ মিনিট করে নিয়মিত সাইক্লিং করলে আপনার শরীরে এন্ডরফিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ হবে, যা আপনার মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও হতাশা কমাতে সাহায্য করে এবং কাজে উদ্যম ও প্রেরণা বাড়ায়।
সাইক্লিং ঘুমের সময় ও মান বাড়ায়।
সাইক্লিংয়ের ফলে শব্দদূষণ ও কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ ও বায়ুদূষণ হ্রাস পায়। এর ফলে হাঁপানি, হৃদ্রোগসহ অন্যান্য রোগ হ্রাস পায়।
ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন: এমডি গবেষক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়