বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব, বারবার প্রস্রাবের বেগ, প্রস্রাবের বেগ পেলে ধরে রাখতে সমস্যা, প্রস্রাব করার জন্য রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া—এসব লক্ষণ থাকলে বুঝতে হবে একজন বয়স্ক পুরুষ প্রোস্টেট গ্রন্থির সমস্যায় ভুগছেন।
প্রোস্টেট পুরুষের জননতন্ত্রের একটি গ্রন্থি, যা শুক্ররসের একটা অংশ তৈরি করে শুক্রকীটের পুষ্টি ও পরিবহনে সাহায্য করে। এর অবস্থান মূত্রথলির ঠিক নিচে, মূত্রথলি থেকে মূত্রনালি এ গ্রন্থির ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসে।
প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রধান রোগ
প্রোস্টেট গ্রন্থি স্ফীত হওয়া (বিনাইন এনলার্জমেন্ট অব প্রোস্টেট)।
প্রোস্টেট গ্রন্থির সংক্রমণ।
প্রোস্টেট ক্যানসার।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে গ্রন্থির আয়তন বাড়তে থাকা। পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সে প্রায় ৮ শতাংশ, ষাটোর্ধ্ব বয়সে ৫০ শতাংশ এবং ৮০–এর বেশি বয়সে ৮০ শতাংশ পুরুষের এ রোগ দেখা যায়। এই স্ফীতি অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিনাইন বা নিরীহ এবং কিছু ক্ষেত্রে মেলিগন্যান্ট বা ক্যানসার প্রকৃতির।
কীভাবে বুঝবেন
বারবার প্রস্রাব, বিশেষত রাতে।
প্রস্রাবের চাপ এলে ধরে রাখতে না পারা।
প্রস্রাবের গতি কমে যাওয়া ও বাড়তি চাপ দিয়ে করা।
প্রস্রাব ঠিকভাবে না হওয়া বা রয়ে যাওয়ার অনুভূতি।
মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা, জ্বালার অনুভূতি।
প্রাথমিক লক্ষণগুলোর পরও যদি সঠিক চিকিৎসা না হয়, তবে জটিলতা তৈরি হতে পারে। তখন বারবার প্রস্রাবে সংক্রমণ, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত, হঠাৎ প্রস্রাব বন্ধ হওয়া বা আটকে যাওয়া, মূত্রথলিতে পাথর বা হার্নিয়া হতে পারে। দীর্ঘদিনের অবহেলায় মূত্রথলি ও কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
করণীয়
চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা করে প্রোস্টেট বড় হয়েছে কি না, বুঝতে পারেন। কিছু টেস্ট করা হয় স্ফীতিটা ঠিক কী ধরনের তা বুঝতে ও চিকিৎসাপদ্ধতি নির্বাচন করতে। বিনাইন প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গ্রন্থির আয়তন, রোগের উপসর্গ, কতটা শারীরিক সমস্যা করছে, কোনো জটিলতা আছে কি না ও পরীক্ষা–নিরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে তিন ধাপে চিকিৎসা করা হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে জীবনযাত্রা পরিবর্তনের উপদেশ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বা মধ্যম পর্যায়ে ওষুধের মাধ্যমে উপসর্গ কমানো সম্ভব। তৃতীয় বা তীব্র পর্যায়ে অস্ত্রোপচার করতে হয়।
নানা ধরনের অস্ত্রোপচার পদ্ধতি রয়েছে। এখন পর্যন্ত ‘টিইউআরপি’কে সবচেয়ে আদর্শ ধরা হয়। এ পদ্ধতিতে কোনো কাটাছেঁড়া ছাড়া অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে প্রোস্টেট গ্রন্থির বাড়তি অংশ কেটে বের করা হয় এবং এক সপ্তাহের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে পারেন।
প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণ বিনাইন রোগের মতোই। ক্যানসার নিশ্চিত হলে স্টেজ গ্রেড অনুযায়ী র্যাডিক্যাল সার্জারি, রেডিওথেরাপি, হরমোন থেরাপি, কেমোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়। আশার কথা, এটি অন্যান্য ক্যানসারের মতো মারাত্মক নয়। এর ছড়িয়ে পড়া অন্য ক্যানসারের তুলনায় অনেক ধীর। ফলে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা করলে সুস্থভাবে অনেক দিন বেঁচে থাকা যায়।
ডা. কাজী জিকরুর রাজ্জাক, ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ, সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, বিআইএইচএস, ঢাকা