প্রোস্টেট ক্যানসার সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে পুরুষের। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর ঝুঁকি বাড়তে থাকে। প্রাথমিক স্তরে শনাক্ত করা গেলে নিরাময় সম্ভব। উন্নত দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করতে পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষের নিয়মিত স্ক্রিনিং করা হয়। সেপ্টেম্বরকে ‘প্রোস্টেট ক্যানসার সচেতনতার মাস’ হিসেবে পালন করা হয়।
প্রোস্টেট ক্যানসার কী
প্রোস্টেট পুরুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি, যা সুপারি আকৃতির এবং মূত্রথলির নিচে অবস্থিত। বয়স্ক পুরুষের প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে মূত্রনালি সংকীর্ণ করে দেয় বলে প্রস্রাবের নানা সমস্যা হতে থাকে। তবে প্রোস্টেট বড় হলেই যে ক্যানসার হয়, তা কিন্তু নয়। বয়সের সঙ্গে প্রোস্টেট বৃদ্ধিকে বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপারপ্লাসিয়া বলে।
উপসর্গ কী
অনেক ক্ষেত্রেই এই ক্যানসারের কোনো উপসর্গ থাকে না। প্রাথমিক পর্যায়ে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে রোগটি ধরা পড়ে। তবে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, প্রস্রাব করতে কষ্ট, সরু ধারায় প্রস্রাব, প্রস্রাব বন্ধ হওয়া এবং মেরুদণ্ডে বা হাড়ে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে।
কীভাবে শনাক্ত করা হয়
রক্তের প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন (পিএসএ) পরীক্ষা।
মলদ্বারে আঙুলের সাহায্যে প্রোস্টেট পরীক্ষা (ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিনেশন—ডিআরই)।
মাল্টি প্যারামেট্রিক এমআরআই।
এসব পরীক্ষায় প্রোস্টেট ক্যানসার সন্দেহ হলে মলদ্বার দিয়ে বায়োপসির মাধ্যমে ক্যানসার শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়।
স্ক্রিনিং কীভাবে করা যায়
রক্তের পিএসএ ও মলদ্বারে ডিআরই করে ক্যানসারের উপস্থিতি বোঝার প্রক্রিয়া হচ্ছে স্ক্রিনিং টেস্ট। এর মাধ্যমে অনেক প্রোস্টেট ক্যানসার প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়ে। আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে স্ক্রিনিং সেবা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে দেরিতে ধরা পড়ে।
চিকিৎসা কী
বায়োপসির মাধ্যমে ক্যানসার শতভাগ নিশ্চিত হলে শরীরে কতটুকু ছড়িয়েছে, তা জানতে কিছু পরীক্ষা করা হয়। প্রোস্টেট ক্যানসার বেশি হাড়ে, অ্যাক্সিয়াল স্পাইন, পেলভিক বোনে ছড়ায়। তাই সারা শরীরের বোন স্ক্যান বা এমআরআই করা হয়। শরীরের অন্য কোথাও ছড়িয়েছে কি না, পেট স্ক্যান দিয়েও বোঝা যায়। ক্যানসার প্রোস্টেট গ্রন্থির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুরো প্রোস্টেট ফেলে দেওয়া হয় অথবা র্যাডিক্যাল রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। তবে রেডিয়েশনের অনেক জটিলতা আছে। প্রোস্টেট ক্যানসারের বৃদ্ধি পুরুষ হরমোনের ওপর নির্ভরশীল। তাই ইনজেকশন বা ওষুধের মাধ্যমে বা অণ্ডকোষ ফেলে দিয়ে অ্যান্ড্রোজেন কমালে প্রোস্টেট ক্যানসারের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
অধ্যাপক আজফার উদ্দীন শেখ, বিশেষজ্ঞ ইউরোলজিস্ট ও অ্যানড্রোলজিস্ট, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা