সন্তানের যেকোনো অসুস্থতায় মা–বাবা চান, যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের শিশু সুস্থ হয়ে উঠুক, একটু আরাম বোধ করুক। বাচ্চাদের তো হামেশা সর্দি-কাশি লেগে থাকে। কিন্তু বাচ্চাদের দ্রুত আরামের জন্য যখন কাশির সিরাপ খাওয়ানোর বিষয় আসে, তখন বিষয়টিকে সতর্কভাবে দেখতে হবে।
বারবার শিশুদের সর্দি-কাশির সমস্যা হওয়ায় অনেক অভিভাবক চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধের দোকান থেকে কাশির ওষুধ কিনে সেবন করানো শুরু করেন। কেউ কেউ আবার প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের কাশির ওষুধই পরিমাণে একটু কমিয়ে বাচ্চাদের খাইয়ে দেন। বাজারে কাশির ওষুধের অভাব নেই।
বেশির ভাগই ‘ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি)’ ওষুধ হিসেবে বাজারে পাওয়া যায়, যা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধ কেনা যায়। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ খাওয়ানো বিপজ্জনক।
অনেক সময় না বুঝে বয়স ও ওজনের অনুপাতে ডোজের হেরফের হয়। শিশুদের শরীরের গঠন বড়দের চেয়ে আলাদা। তাই তাদের ওষুধের উপাদান ও মাত্রার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা দরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) কিছু মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে দুই বছরের নিচের শিশুদের জন্য ‘ওভার দ্য কাউন্টার’ কাশির সিরাপ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। এসব ওষুধ খেলে খিঁচুনি, শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা, মাথাব্যথা, অস্থিরতা, ঝিমুনি বা দুর্বল ভাব ইত্যাদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে, যা খুবই বিপজ্জনক।
মনে রাখতে হব, বেশির ভাগ কাশির সিরাপই শিশুদের জন্য তেমন কার্যকর নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাশির ওষুধ ছাড়াই ঘরোয়া কিছু ব্যবস্থাপত্রে শিশু ভালো হয়ে যায়। কাশি কমাতে শিশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি, কুসুম গরম পানি, তরল খাবার খাওয়ানো এবং নাকে সাধারণ স্যালাইন–জাতীয় ড্রপ দেওয়া যেতে পারে। কুসুম গরম পানিতে পাতলা পরিষ্কার কাপড় ডুবিয়ে তা শলাকার মতো করে নাক পরিষ্কার করে দিলে শিশু আরাম পাবে।
কাশি সব সময় খারাপ নয়। কখনো কখনো কাশির মাধ্যমে শ্বাসনালিতে ঢুকে পড়া ময়লা, জীবাণু বের হয়ে যায়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুদের সর্দি–কাশি হলে অন্য যেসব লক্ষণ খেয়াল রাখতে হবে—
২ মাসের কম বয়সী শিশুর জ্বর যদি ১০০ দশমিক ৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়।
২ মাসের বেশি বয়সী শিশুর জ্বর যদি ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়।
শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হলে, দ্রুত শ্বাস নিলে, শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের খাঁচা দেবে গেলে।
বাচ্চা খেতে না পারলে অথবা নেতিয়ে পড়লে, পানিশূন্যতা দেখা দিলে। ঠোঁট নীল হয়ে গেলে।
অতিরিক্ত মাথাব্যথা বা কানে ব্যথা থাকলে।
অতিরিক্ত অস্থিরতা অথবা ঘুম ভাব থাকলে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুর কাশির সঠিক কারণ, যেমন ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, টনসিলাইটিস, অ্যাজমা অথবা শ্বাসতন্ত্রের অন্য কোনো সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর