ঈদে সুস্থ থাকতে কী কী করবেন
এবার ঈদ হচ্ছে চৈত্রের শেষ সপ্তাহে। গত কয়েক সপ্তাহের ভেতর বৃষ্টিও অবশ্য হয়েছে; উদ্দাম হাওয়ার তোড়ে একটা গোটা সকাল যেন উড়েই চলে গেল সেদিন। তবে এত সবের মধ্যেও প্রখরতা ছড়িয়েছে চৈত্রের সূর্য। ঈদের সময়টায় আনন্দ আয়োজন, জম্পেশ খাওয়াদাওয়া আর ঘোরাঘুরি তো হবেই। তবে ভুলে যাওয়া চলবে না, একেবারে লাগামহীন খাওয়াদাওয়া আর গরম আবহাওয়ায় অসতর্ক ঘোরাঘুরিতে হুট করেই মাটি হয়ে যেতে পারে ঈদের আনন্দ।
উৎসব মানেই কিন্তু গুরুপাক খাবার কিংবা জবরজং সাজপোশাকের বাহার নয়। পবিত্র রমজানের দীর্ঘ এক মাসের রুটিন বদলে হুট করে নানা রকম ভারী খাবার খাওয়া অনুচিত। বরং ঈদের খাবারতালিকায় রাখুন সহজপাচ্য খাবার। গরম আবহাওয়ায় ঠান্ডা খাবার খান। মৌসুমি ফলমূল, শাকসবজি এবং দুধের তৈরি খাবার খাওয়া ভালো। রান্না করা কোনো খাবারই খুব বেশিক্ষণ বাইরে রাখা ঠিক নয়। বাড়ির বাইরে গেলে অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। গরমে অতিরিক্ত ঘোরাঘুরি না করে বন্ধু-স্বজনেরা একে অন্যের বাড়িতে গিয়েও আড্ডা জমাতে পারেন। যে সময়টুকু ঘরের বাইরে থাকা হবে, সে সময়ও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহনূর শারমিন।
খাবারদাবার এবার যেমন
ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সাইন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান জানালেন খাবারদাবারের বিস্তারিত। কম তেল ও কম মসলায় রান্না করা খাবার দিয়েই পরিপূর্ণ হতে পারে ঈদের আনন্দ। নানা রকম পানীয় বানাতে পারেন ঘরেই। অতিথি আপ্যায়নেও পানীয় দারুণ এক উপকরণ। টক দই বা মিষ্টি দইয়ের লাচ্ছি বানাতে পারেন। জিরাপানি, ফলের রস করতে পারেন। সবার জন্য তো বটেই, পানি খেতে গিয়ে কেউ সমস্যা অনুভব করলে তাঁর জন্যও পুদিনাপাতা বা ধনেপাতার মতো সাধারণ উপকরণ দিয়ে তৈরি পানীয় দারুণ। কোমল পানীয়, প্যাকেটজাত পানীয় বা প্যাকেটজাত গুঁড়া দিয়ে তৈরি পানীয় এড়িয়ে চলুন অবশ্যই।
এসব বিষয়ও খেয়াল রাখার পরামর্শ দিলেন শম্পা শারমিন খান—
পোলাও রান্নায় ঘিয়ের বদলে সয়াবিন তেল ব্যবহার করুন। ঘি যদি ব্যবহার করতেই চান, তাহলে কেবল ওপর দিয়ে ছড়িয়ে দিন, সেটিও অল্প।
জলপাই তেল কিংবা শর্ষের তেল দিয়েও কিছু পদ করতে পারেন। সালাদে ব্যবহার করতে পারেন জলপাই তেল।
মাখন ও মেয়োনেজ বর্জনীয়।
মিষ্টান্নেও ঘিয়ের ব্যবহার কমিয়ে আনুন। চিনির বদলে মধু, তালমিছরি কিংবা ব্রাউন সুগার দিয়ে তৈরি করতে পারেন মিষ্টান্ন।
মাংসের চর্বি ফেলে দিন রান্নার আগে, যতটা পারেন। এমনকি ব্রয়লার মুরগির মাংসের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
গুঁড়া মসলার চেয়ে বাটা মসলায় রান্না করা ভালো।
রান্নায় ধনের ব্যবহার কমিয়ে দিন।
খাবারের সঙ্গে কাঁচা সালাদ রাখুন অবশ্যই।
একবারে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। রয়েসয়ে, অল্প করে খান। দুবার খাওয়ার মাঝে অন্তত দুই ঘণ্টা বিরতি দিন।
খাবার খাওয়ার সময় পানি খাবেন না। খাবার খাওয়ার ১৫–২০ মিনিট পর পানি বা পানীয় খাবেন। খাওয়ার আগে পানি বা পানীয় খেতে চাইলে সেটিও ১৫-২০ মিনিট আগে।
সুস্থ থেকে ঈদ আয়োজন
সুস্থতা বজায় রেখে সাজপোশাক এবং ঘোরাঘুরির পরামর্শ দিয়েছেন ডা. শাহনূর শারমিন।
ঘরে ও বাইরে আরামদায়ক পোশাক পরুন। এমন কাপড় বেছে নিন, যার মধ্য দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে।
পুরু মেকআপ, ভারী গয়না এড়িয়ে চললেই স্বস্তিতে থাকবেন।
অতিরিক্ত রোদের সময়টায় ছায়ায় থাকতে হবে। অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
বাইরে যাওয়ার সময় সানগ্লাস ও ছাতা ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিনসামগ্রীও লাগিয়ে নিন নিয়মমাফিক। সঙ্গে রাখতে পারেন পানির ফ্লাস্ক। প্লাস্টিকের পাত্রে পানি রাখা ঠিক নয়।
ঘাম হলে দ্রুত মুছে ফেলতে চেষ্টা করুন। ঘামে পোশাক ভিজে গেলে বদলে ফেলুন। অতিরিক্ত ঘাম হলে অন্যান্য পানীয় ছাড়াও ওরস্যালাইন খেতে হবে।
ধুলাবালুতেও নানান স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তাই ধুলাবালু এড়িয়ে চলুন। মাস্ক পরাও ভালো অভ্যাস।
সবাইকে নিয়েই হোক উৎসব
যাঁরা বাড়িতে রান্নাবান্নার কাজ করেন, তাঁদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিলেন ডা. শাহনূর শারমিন। তাঁদের যাতে অতিরিক্ত সময় রান্নাঘরে কাটাতে না হয় কিংবা বারবার রান্নাঘরে যেতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি এবং শিশুরা গরমে সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাঁদেরও তাই যত্ন নিতে হবে। যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন, খাবারদাবার ও পানির পরিমাণের বিষয়ে চিকিৎসকের কোনো নির্দেশনা থাকলে মেনে চলতে সাহায্য করুন; ওষুধ সেবনেও যাতে ভুল না হয়। পোষা প্রাণীগুলোও যাতে গরমে কষ্ট না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। অসহায় মানুষ ও প্রাণীর জন্যও কিছু করুন।