আপনার বাথরুমের সবচেয়ে জীবাণুযুক্ত জিনিসটি হলো...

শিরোনাম পড়ে হয়তো ভাবছেন, বাথরুমের সিটের চেয়ে অপরিষ্কার আর কীই–বা হতে পারে! কিন্তু, না; হাই কমোডের সিট কিংবা ঝরনার মুখ সঠিক উত্তর নয়। তবে কী? মনে মনে ভাবতে থাকুন আর পড়তে থাকুন।

বাথরুমে ময়লা ও দুর্গন্ধ থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে আধুনিক বাথরুমগুলোতে সাধারণত কমোড, বেসিন এবং ঝরনা থাকে। তাই আপনি যত নিয়মিতই তা পরিষ্কার করুন না কেন, ময়লা আর দুর্গন্ধ হবেই এবং যেহেতু কমোডের সিটে বসেই আপনি মলমূত্র ত্যাগ করে থাকেন, তাই সেটিই সবচেয়ে ময়লা জিনিস হবে, এমনটা আপনি ধারণা করতেই পারেন। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছে।

বাথরুমের সবচেয়ে জীবাণুযুক্ত জিনিস কী?
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

সবার আগে আমরা কমোড পরিষ্কার করি। কমোডের ভেতরের দেয়ালে হলুদ দাগ লেগে থাকে, সেটিও পরিষ্কার করি। কিন্তু বাথরুমে থাকা অন্য জিনিসগুলো? সেগুলো পরিষ্কারে আমরা অতটা মনযোগী হই না।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার অণুজীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. চার্লস গ্যারবা বলেন, বাথরুমের জিনিসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অপরিষ্কার ও জীবাণুযুক্ত হলো পাপোশ, এরপরই বাথরুমের স্যান্ডেলের অবস্থান।


আমাদের ঘরবাড়িতে থাকা অণুজীবদের নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করে ড. গ্যারবা জানতে পেরেছেন, বাথরুমের পাপোশ অন্য জিনিসগুলোর তুলনায় সবচেয়ে নোংরা হওয়ার কারণ মূলত দুটি। প্রথমত, গোসল করে বের হওয়ার সময় আমাদের শরীর থেকে গড়িয়ে পড়া পানির কারণে কাপড়ের তৈরি পাপোশটি ভিজে যায় এবং সারা দিন তা আর্দ্র থাকে।

বাথরুমের সবচেয়ে জীবাণুযুক্ত জিনিস ভেজা পাপোশ
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

দ্বিতীয়ত, অনেকে বাথরুমে জুতা ব্যবহার করেন। জুতায় লেগে থাকা ময়লা বাথরুমে ঢোকা এবং বের হওয়ার সময় পাপোশে লেগে যায়। বাথরুমে থাকা ব্যাকটেরিয়ার ৯০ শতাংশই আমরা আমাদের পরিধেয় জুতায় বহন করি।


ড. গ্যারবা বলেন, পাপোশ ময়লা হওয়ার আরও একটি কারণ কমোড থেকে ছিটকে বা উড়ে আসা জীবাণু। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডারের একটি নিরীক্ষায় উঠে এসেছে, কমোডে ফ্ল্যাশ করার আট সেকেন্ডের মধ্যে হাজার হাজার জীবাণু ফ্ল্যাশের পানির তোড়ের সঙ্গে ছিটকে এসে দেড় মিটারের বেশি দূরে গিয়ে আছড়ে পড়ে। পানির তোড়ের সঙ্গে ছিটকে আসা এই জীবাণুগুলো এতই ক্ষুদ্র যে আমাদের সাধারণ মানুষের পক্ষে তা টের পাওয়া সম্ভব নয়। তাই ফ্ল্যাশ করার সঙ্গে সঙ্গে বাথরুমের চারদিকের দেয়ালসহ ভেতরে রাখা সব রকম জিনিসেই তা ছড়িয়ে পড়তে পারে মুহূর্তেই।

সবার আগে আমরা কমোড পরিষ্কার করি। কমোডের ভেতরের দেয়ালে হলুদ দাগ লেগে থাকে, সেটিও পরিষ্কার করি
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

জীবাণু থেকে আপনার পাপোশ যেভাবে নিরাপদ রাখবেন


জীবাণু থেকে পাপোশ নিরাপদে রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো শুকনা রাখা। ভেজা পাপোশ জীবাণুর আস্তানা। বাথরুম ব্যবহারের পর ভিজে যাওয়া পাপোশ দিনের পর দিন বাথরুমেই পড়ে থাকে। সহজে তা শুকাতে পারে না। পাপোশ জীবাণুমুক্ত রাখতে তাই নিয়মিত রোদে শুকান।


বাথরুমের জুতা বাথরুমেই রাখুন। বাথরুম থেকে বের করবেন না। এতে বাথরুমের সামনে রাখা পাপোশটি যথাসম্ভব শুকনা থাকবে। আর শুকনা পাপোশে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকাটা কঠিন হয়ে উঠবে।

কীভাবে পাপোশ পরিষ্কার করবেন


বাথরুমের অন্যান্য জিনিসগুলো আমরা স্প্রে কিংবা লিকুইড দিয়ে পরিষ্কার করে জীবাণু দূর করতে পারি। কিন্তু কাপড় বা রবারের তৈরি পাপোশ? সেটা কীভারে পরিষ্কার করবেন?

নিয়মিত পাপোশ পরিষ্কার করতে হবে
ছবি: পেক্সেলস ডটকম


পাপোশ পরিষ্কারের মূল উদ্দেশ্য শুধু ময়লা দাগ দূর করা নয়, সেই সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া নাশ করা। কাপড়ের তৈরি পাপোশের গায়ে লেবেল দেওয়া থাকে। লেবেলে লেখা আছে কী তাপমাত্রায়, কতক্ষণ এবং কতটুকু ডিটারজেন্ট দিয়ে তা ওয়াশিং মেশিনে দেবেন। লেবেল অনুসরণ করে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার কাপড়ের পাপোশ ধুয়ে ফেলুন।
আবার রবারের তৈরি পাপোশ আপনি ওয়াশিং মেশিনের গরম পানিতে ছাড়তে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানিতে ভিন্নভাবে পরিষ্কার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে রবারের পাপোশের গায়ে থাকা লেবেল দেখুন, সমাধান পেয়ে যাবেন। সপ্তাহে অন্তত দুবার রবারের পাপোশ পরিষ্কার করা উচিত।


সুত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন