বিশেষ করে বয়স্কদের, অনেক সময় অপেক্ষাকৃত কম বয়সেও ভুলে যাওয়া রোগ দেখা দেয়। বলা হয়, ষাটোর্ধ্ব প্রতি ২০ জনে ১ জন ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়া রোগে ভোগেন। ভুলে যাওয়া কি আসলে কোনো রোগ?
ডিমেনশিয়া শুধু একা কোনো রোগের লক্ষণ নয়, এর সঙ্গে মস্তিষ্কের অন্যান্য কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়ার লক্ষণও প্রকাশ পায়। ভাষা ও আচরণগত সমস্যা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, বুদ্ধিমত্তা লোপ, মনোবৈকল্য ইত্যাদি লক্ষণ ক্রমাগতভাবে দেখা দেয়। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডিমেনশিয়ার কিছু কারণ প্রতিকারযোগ্য এবং কিছু অপ্রতিকারযোগ্য।
কারণ
মস্তিষ্কের নিউরন শুকিয়ে যাওয়া (আলঝেইমার ও পারকিনসনস ডিজিজ)।
বারবার স্ট্রোক (মাল্টি–ইনফার্কট ডিমেনশিয়া)।
ভিটামিনের অভাব (ভিটামিন বি১২)।
মস্তিষ্কের সংক্রমণ (এইডস, নিউরোসিফিলিস)।
ব্রেইন টিউমার।
মাথায় আঘাত।
থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা।
নরমাল প্রেশার হাইড্রোসেফালাস।
দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
জেনেটিক বা বংশগত কারণ।
মাদকাসক্তি (অ্যালকোহল, ইয়াবা সেবন)।
বিষণ্নতা ইত্যাদি।
প্রধান লক্ষণ
স্মৃতিশক্তি লোপ।
প্রতিদিনের কাজের বিভ্রান্তি।
ভাষাগত সমস্যা।
সময় ও স্থান চিহ্নিত করতে অপারগতা।
বিচার-বিবেচনার মাত্রা কমে যাওয়া।
অন্যমনস্ক হওয়া।
জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলা।
মেজাজ ও স্বাভাবিক আচার-আচরণে পরিবর্তন।
ব্যক্তিত্ববোধের পরিবর্তন।
কর্মোদ্যম হারিয়ে ফেলা।
অনিদ্রা, খাবারে অরুচি ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয়
রোগের লক্ষণ বিশ্লেষণ এবং রোগীর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা বা মিনিমেন্টাল স্ট্যাটাস পরীক্ষা করে ডিমেনশিয়া শনাক্ত করা হয়। কারণ বের করতে প্রয়োজনীয় বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষা, নিউরো–ইমেজিং, এমনকি প্রয়োজনে ব্রেইন বায়োপসি করা লাগতে পারে।
মিনিমেন্টাল স্ট্যাটাস পরীক্ষা কী
ডিমেনশিয়া রোগ নির্ণয়ে বেডসাইড টেস্ট হিসেবে এটি অত্যন্ত কার্যকর পরীক্ষা। এর সাহায্যে একটি স্কেলের মাধ্যমে মস্তিষ্কের পাঁচটি মৌলিক কার্যক্ষমতা নিরীক্ষা করা হয়, যেমন পরিচিতি, অন্তর্ভুক্তিকরণ, মনোযোগ ও গণনা, পুনরুক্তি এবং ভাষা।
চিকিৎসা
রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। কখনো রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করে রাখার প্রয়োজন হয়।
চিকিৎসকের প্রধান দায়িত্ব রোগীর ডিমেনশিয়ার মূল কারণ শনাক্ত করে এর চিকিৎসা দেওয়া। যদি রোগীর এমন ডিমেনশিয়া হয়ে থাকে, যা চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ আরোগ্য সম্ভব নয়, তখন রোগীর স্বজন বা সেবা প্রদানকারীকে বিশদভাবে রোগের বর্ণনা দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ রোগের প্রকৃতি, সেবার ধরন ও চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে ধৈর্যের সঙ্গে আলোকপাত করতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাসেবা দিতে হবে।
ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা