কোহলির ডিম খাওয়া নিয়ে কেন এত বিতর্ক?
ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, বলিউডের সিনেমা–ভক্তদের কাছে যিনি আনুশকা শর্মার জীবনসঙ্গী হিসেবেও পরিচিত, সেই বিরাট কোহলি এখন ভেজিটেরিয়ান। কোহলির ভক্তমাত্রই জানেন, তিনি বাটার চিকেন, বিরিয়ানি, মাটন কাবাব কতটা ভালোবাসতেন! একসময় দিনে দুই বেলা চিকেন খেতেন বিরাট। গ্রিলড ফিশ ছাড়া ডিনার ছিল অসম্পূর্ণ। আর এখন তিনি মাছ বা মাংস ছুঁয়েও দেখেন না।
কেন ভেজিটেরিয়ান হলেন বিরাট?
২০১৮ সালের কথা। তিনি তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলছিলেন। হঠাৎ করেই ঘাড়ে টান বোধ করেন। আর প্রচণ্ড ব্যথা। শিড়দাঁড়ার সমস্যার শুরু সেই থেকে। ধীরে ধীরে এই সমস্যা নার্ভেও ছড়িয়ে পড়ে। রাতে ঘুমাতে পারছিলেন না। চিকিৎসকেরা শুরুতে কারণও ধরতে পারছিলেন না। পরে ডায়াগনোসিসে ধরা পড়ে, ঘাড়ের একটা অংশ ফুলে গেছে। আর এর কারণ অতিরিক্ত মাংস খাওয়া। চিকিৎসক ও ডায়েটেশিয়ানদের একটা দল তাঁকে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পরামর্শ দেন।
কী হয়েছিল?
অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে একধরনের অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। ফলে ক্যালসিয়াম কমে গিয়েছিল। আর এসবের ফলে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিচ্ছিল। আর এসবের একটাই সমাধান, কোনো ওষুধ নয়, ফিজিওথেরাপিও নয়, কেবল মাংস খাওয়া বন্ধ করা! এরপরই ভেজিটেরিয়ান হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিরাট কোহলি।
ডিম নিয়ে কেন এত বিতর্ক
বিরাট ভেজিটেরিয়ান হওয়ার পর ইনস্টাগ্রামে এক ভক্তের প্রশ্নের উত্তরে জানান, তিনি প্রতিদিন সকালে লাল আটার ব্রেড আর সেদ্ধ ডিম দিয়ে নাশতা সারেন। এরপরই প্রাণীবাদী ভেগান নেটিজেনরা বলতে শুরু করেন, এ আবার কেমন নিরামিশাষী যে ডিম, দুধ আর দুধজাত খাবার সব খায়! আসলে তাঁদের একাংশ মনে করেন মুরগির ডিম খাওয়া মানে ওই মা মুরগির সঙ্গে অন্যায় করা। গরুর দুধ খাওয়া মানে বাছুরের হক নষ্ট করা। তাঁদের মতে, কোনো প্রাণী বা প্রাণিজাত খাবার খাওয়া উচিত নয়।
আসলে, এই ভুল–বোঝাবুঝির জন্য দায়ী ভেজিটেরিয়ান আর ভেগানিজমের দ্বন্দ্ব। বিশ্বব্যাপী ভেগান বা ভেগানিজম এখন নতুন প্রজন্মের নতুন এক ট্রেন্ড। ভেগানিজম এমন এক জীবনধারা, যেখানে প্রাণী ও প্রাণিদেহের দ্বারা তৈরি সব খাবার ও ব্যবহার্য পণ্য বর্জন করা হয়। ভেগানরা ডিম, দুধ আর দুধের তৈরি কোনো খাবার, যেমন ছানা, দই, পনির, সন্দেশ, রসগোল্লা এসব কিছু চেখেও দেখেন না। অন্যদিকে ভেজিটেরিয়ানরা ডিম, দুধ খেতে পারেন। এই বিতর্ক থামাতে কোহলি তাঁর ইনস্টাগ্রামে এক ভিডিওতে বলেন, ‘আমি কি বলেছি যে আমি ভেগান। আমি ভেজিটেরিয়ান। ভালোভাবে জানুন। আর বেশি করে শাকসবজি খান।’
কোহলির দেখাদেখি আনুশকাও...
পাঁচ বছর ধরে কোহলি ভেজিটেরিয়ান। অন্যদিকে সাড়ে তিন বছর হলো আনুশকাও মাছ–মাংস ছেড়ে ভেজিটেরিয়ান হয়েছেন। আনুশকা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘নিরামিশাষী হওয়ার পর আমি আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়েছি। শারীরিকভাবে আরও ভালো বোধ করি। আর আমি খুশি যে আমার জন্য কোনো প্রাণীকে মরতে হচ্ছে না।’
কেবল মাংস নয়, বিরাট কোহলি নিজের খাবার থেকে অতিরিক্ত তেল আর মসলাও বাদ দিয়েছেন। যেটুকু না হলেই নয়, কেবল সেটুকুই। বিরাটের প্রিয় খাবারের তালিকায় এখন রয়েছে পালংশাক আর বাদাম। সকালে তিনি ডিম আর ব্রেডের সঙ্গে আরও খান গোলমরিচ দিয়ে রান্না করা পালং, পনির সালাদ।
দুপুরে খান লাল আটার রুটি আর মিষ্টি। সঙ্গে প্রোটিন শেক। রাতের খাবার আরও সাধারণ। রুটি, ডাল আর সবুজ–রঙিন সবজি। আর অনুশীলনের পরে প্রোটিন শেক, সয়াদুধ ও বাটার পনির খান।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিরাট কীভাবে নিজের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলেন, এ বিষয়ে জানান, ‘আমি প্রথমে কাউন্সেলিং করি। কেননা, নিজের প্রিয় সব খাবারকে বিদায় বলা সহজ নয়। আর আমাকে সেটা করতেই হতো। কোনো বিকল্প ছিল না। তাই আমি শুরুতে মানসিক প্রস্তুতি নিই। আর এখন আমি নিজের শারীরিক সুস্থতা আর ফিটনেসের জন্য যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত। নিজের মনকে এখন এমনভাবে প্রস্তুত করেছি যে আগামী ছয় মাস আমাকে যদি একই খাবার খেয়ে থাকতে হয়, আমি পারব।’