রাসেলস ভাইপার সত্যি কি আতঙ্কের

প্রতীকী ছবি

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ১০০ প্রজাতির সাপের মধ্যে মাত্র ১২টি বিষধর। রাসেলস ভাইপার বিষধর, তবে সবচেয়ে বিষধর নয়। একটি ধারণা তৈরি হয়েছে, এটি মানুষকে দেখলেই আক্রমণ করে। এটি নিতান্তই ভুল ধারণা। এটি সাধারণত ঝোপঝাড়, বড় তৃণবন কিংবা ধান, গমখেতে বাস করে।

ওঝা কিংবা গুনিনের কাছে নিয়ে সময়ক্ষেপণ করলে সঠিক সময়ে চিকিৎসার সুযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। আক্রান্ত অঙ্গ কোনো রশিজাতীয় কিছু দিয়ে বাঁধা যাবে না। অনেকে একটি, দুটি, এমনকি তিনটি ডোর বাঁধেন, এটি সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। ছুরি, কাঁচি কিংবা ব্লেড দিয়ে কাটাছেঁড়া করা যাবে না।

সাপে কামড়ালে কী ঘটে

এ ধরনের সাপের কামড়ে আক্রান্ত স্থানে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়, ফুলে ওঠে, ফোসকা পড়ে, রক্তক্ষরণ হয়। কখনো আক্রান্ত স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়, পচন ধরে, গ্যাংগ্রিন হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গেও এর প্রভাব দেখা দিতে পারে। বিষধর সাপের কামড়ে রক্ত তঞ্চনপ্রক্রিয়া সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। ফলে শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। নাক, মুখের পাশাপাশি বমির সঙ্গে, পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

দংশনের ফলে অরুচি হতে পারে। মাংসপেশির কোষ ভেঙে র‍্যাবডো মায়োলাইসিস হতে পারে। এতে প্রস্রাব কমে যায়, খয়েরি বর্ণ ধারণ করে। কিডনি বিকল হতে পারে। রক্তচাপ কমে যায়, হৃৎস্পন্দন এলোমেলো হয়ে যায়। অনেক সময় রক্তনালি থেকে রক্তরস বের হয়ে আসে।

করণীয় কী

সাপে কামড় দিলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। বিষধর সাপ কামড় দিলেই বিষ শরীরে ঢুকবে, এমন না–ও হতে পারে। ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই হতে পারে ড্রাই বাইট। এর অর্থ, সাপ কামড়ালেও শরীরে বিষ ঢোকে না। তবে যা–ই হোক, আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। রোগীর আক্রান্ত স্থান অনড় রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রেশার ব্যান্ডেজ ব্যবহার করতে হবে। হাতে–পায়ে আংটি, চুড়ি থাকলে খুলে ফেলতে হবে।

যা করা যাবে না

ওঝা কিংবা গুনিনের কাছে নিয়ে সময়ক্ষেপণ করলে সঠিক সময়ে চিকিৎসার সুযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। এতে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। সাপের দংশনে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো দেরিতে হাসপাতালে নেওয়া। আক্রান্ত অঙ্গ কোনো রশিজাতীয় কিছু দিয়ে বাঁধা যাবে না। অনেকে একটি, দুটি, এমনকি তিনটি ডোর বাঁধেন, এটি সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। ছুরি, কাঁচি কিংবা ব্লেড দিয়ে কাটাছেঁড়া করা যাবে না।

চিকিৎসা

রাসেলস ভাইপারসহ সব প্রজাতির সাপের কামড়ের বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা রয়েছে। সাপের কামড়ের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিভেনম। বিষের বিরুদ্ধে কর্মক্ষম প্রতিবিষ। রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রয়েছে। যথাসময়ে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারে।

হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের ফলে ৭০ শতাংশ রোগীর বেঁচে যাওয়ার নজির রয়েছে। তবে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া গেলে এই মৃত্যুহার আরও কমিয়ে আনা সম্ভব।

  • লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, বরিশাল