টনসিলে যে লক্ষণগুলো থাকলে অস্ত্রোপচার লাগতে পারে
আমাদের গলার ভেতর দিকের দুই পাশের দুটি গ্রন্থির নাম টনসিল। এই গ্রন্থি আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেমের অংশ, যা প্রয়োজনে অ্যান্টিবডি তৈরি করে প্রাথমিক রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে। আর টনসিলাইটিস মানে হলো টনসিলের প্রদাহ। শিশুদের এটি অন্যতম ও সাধারণ একটি সমস্যা, যা বছরে বারবারও হতে পারে।
কেন হয় টনসিলে প্রদাহ? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। সাধারণত কম বয়সী শিশুরা ভাইরাসজনিত কারণে (যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা) টনসিলাইটিসে আক্রান্ত হয়। শীতের দিনে মৌসুমি ফ্লু হওয়ায় টনসিলাইটিসের প্রকোপ বাড়ে। এ ছাড়া ‘গ্রুপ এ বিটা-হেমলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস’ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুর টনসিলাইটিস হতে পারে।
লক্ষণ
১. মাঝারি থেকে তীব্র জ্বর।
২. গলাব্যথা, খাবার গিলতে ও ঢোক গিলতে কষ্ট, শিশু খেতে চায় না, অনেক সময় বমি করে।
৩. মাথাব্যথা, কানব্যথা।
৪. মুখে দুর্গন্ধ ও মুখ থেকে লালা ঝরা।
৫. গলার স্বরে পরিবর্তন।
৬. এ ছাড়া টনসিল বেশি বড় হয়ে গেলে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।
গলার ভেতর টর্চ দিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যায় যে দুদিকের টনসিল লাল হয়ে ফুলে গেছে। অনেক সময় এর ওপর হলুদ বা সাদা আস্তরণও পড়ে। এ ছাড়া গলার দুই পাশের চাকার মতো লিম্ফ নোড (লসিকাগ্রন্থি) বড় হয়ে যায় ও ব্যথা করে।
চিকিৎসা
ভাইরাসজনিত টনসিলাইটিসের জন্য প্যারাসিটামল ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া গরম পানি ও লবণ দিয়ে কুলকুচি, আদার রস, মধু, স্যুপ ইত্যাদি গরম তরলজাতীয় খাবার গ্রহণে উপকারে আসে।
তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত টনসিলাইটিস হলে এসবের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। মনে রাখতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিকের পুরো কোর্স সম্পন্ন না করলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।
জটিলতা
তাৎক্ষণিক ও দূরবর্তী দুই ধরনের জটিলতাই হতে পারে। পেরিটনসিলার অ্যাবসেস, বাতজ্বর বা রিউমেটিক ফিভার এবং পোস্ট স্ক্রিপটোকক্কাস গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস নামে কিডনির জটিল রোগ হতে পারে এ থেকে।
কখন অপারেশন করতে হয়
টনসিলাইটিসের চিকিৎসা হিসেবে সব ক্ষেত্রে টনসিলেকটমি অপারেশন বা টনসিল ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি বারবার ইনফেকশন হয় (বছরে সাতবার বা পরপর দুই বছর বছরে পাঁচবারের বেশি), ক্রনিক টনসিলাইটিস, টনসিলের আশপাশে পুঁজ জমে যায়, অতিরিক্ত বড় টনসিলের কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা অথবা ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত বা অবসট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া হয়, সেসব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে।