দীপিকা পাড়ুকোন নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যা বলেছেন
আজ বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। আত্মহত্যা, মানসিক স্বাস্থ্য—এসব প্রসঙ্গে সব সময়ই সরব ভারতীয় অভিনয়শিল্পী দীপিকা পাড়ুকোন। নিজের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কথাও তিনি অকপটে বলেছেন। গড়ে তুলেছেন দ্য লিভ লাভ লাফ ফাউন্ডেশন নামের একটি অলাভজনক সংস্থা, যা মানসিক স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরিতে কাজ করে।
বিষয়টা নিয়ে আমি কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছিলাম না—এটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। কারণ, কিসের ভেতর দিয়ে যে যাচ্ছি, বললেও কেউ বুঝত না।
শুরুতে তো আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না, কেমন করে কাউকে সমস্যাটা বলা যায়। আমার পেটের ভেতর একধরনের অস্বস্তি হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আমি আর ঘুম থেকে উঠতে চাই না। একটা নতুন দিনের মুখোমুখি হতে চাই না। শুধু ঘুমানোর সময়টাই স্বস্তির মনে হতো। কারণ, মনে হতো ঘুমই আমার একমাত্র পালানোর পথ। অ্যালার্মের শব্দ শুনলে এখনো আমার ভয় করে।
প্রতিটা দিনই ছিল একেকটা চ্যালেঞ্জ। মনে হতো যেকোনো সময় আমি কান্নায় ভেঙে পড়ব। কিন্তু আমার পেশাটাই এমন যে আজ এক জায়গায় তো কাল আরেক জায়গায় থাকতে হয়। একটি দিনের সঙ্গে আরেকটি দিনের কোনো মিল নেই। কারা আমাকে ঘিরে রেখেছে, কোথায় আমি আছি, এসব নিয়ে তখন ভীষণ উদ্বেগ কাজ করত। যদি সবার সামনেই আমি ভেঙে পড়ি, এই ভয়ে! লোকে হয়তো আমার চেহারা দেখেই সবকিছু বুঝে ফেলছে, এই ভাবনাও আমাকে সর্বক্ষণ ভোগাত। জোর করে হাসা, ‘সবকিছু ঠিক আছে’ দেখানোর চেষ্টা করাটা খুব কঠিন।
যে মানুষটি প্রথম আমাকে বলল, ‘আমি জানি তোমার সমস্যাটা কী,’ তাঁর সঙ্গে আরও আগে দেখা হলে হয়তো অনেক কিছুই সহজ হয়ে যেত। সে জন্যই আমার মনে হলো, যাঁরা আমার মতো সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্যই আমার কথা বলা দরকার।
‘ডিপ্রেশন’ বা বিষণ্নতা যে একটা মানসিক সমস্যা, এটা যখন প্রথম জানলাম, তখনই আমার জন্য এই সমস্যার সঙ্গে লড়াই করা অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে।
আমাদের স্কুলগুলোর পাঠ্যক্রমে শারীরিক শিক্ষা আছে। মানসিক শিক্ষা বলে কিছু নেই। স্কুল পর্যায় থেকেই যদি আমরা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে পারি, তাহলে হয়তো আর কোনো ভুল ধারণা থাকবে না।
বিষণ্নতা, আত্মহত্যাপ্রবণতা—এসবই তো সামনের দিনের সবচেয়ে বড় মহামারি। এই মহামারি রুখতে হলে শিক্ষার্থী, মা-বাবা, শিক্ষক, করপোরেট প্রতিষ্ঠান—সবার সহায়তাই আমাদের প্রয়োজন।
সূত্র: দ্য লিভ লাভ লাফ ফাউন্ডেশন
অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ