ক্যানসারের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একটি চিকিৎসাপদ্ধতি হলো রেডিওথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি। ক্যানসারের ধরনের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকেরা এ থেরাপির পরামর্শ দেন। এর সাহায্যে ক্যানসারের কোষ মেরে ফেলা হয়। দেখা যায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ক্যানসার রোগীর ক্ষেত্রে কোনো না কোনো সময় রেডিওথেরাপি প্রয়োজন হয়।
রেডিয়েশন থেরাপি উচ্চ শক্তির বিকিরণ ব্যবহার করে ক্যানসার কোষের ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এগুলোর বিভাজন ও বৃদ্ধির ক্ষমতা নষ্ট করে। লিনিয়ার এক্সিলারেটর নামের আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে এ থেরাপি দেওয়া হয়। উচ্চ শক্তি নির্গমনের কারণে এক্স-রে ক্যানসার কোষ মেরে ফেলতে পারে ও টিউমার সংকুচিত করে।
ভুল ধারণা
রোগীদের মধ্যে রেডিয়েশন থেরাপি নিয়ে অনেক ভুল ধারণা ও ভীতি কাজ করে। অথচ এ থেরাপিতে রোগীর দেহে কোনো ব্যথা হয় না। বলা যায়, অনেকটা এক্স-রের মতো। রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে এর সময়কাল নির্ধারণ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এ থেরাপির ফলে স্বাস্থ্যকর কোষের ক্ষতি হয় ঠিকই, তবে সেটি স্থায়ী নয়। শুধু প্রয়োজনীয় পয়েন্টগুলো লক্ষ্য করে এ থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। পাশাপাশি ক্যানসার নয়, এমন কোষগুলো রেডিয়েশন থেরাপি থেকে নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে পারে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ওজন কমা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ক্ষুধা কমে যাওয়ার মতো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন ও পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি খাদ্যতালিকা তৈরি করে তা মেনে চলতে হয়।
থেরাপির পর্যায়
বিভিন্ন পর্যায়ে রেডিওথেরাপি ব্যবহার করা যায়। যেমন শেষ পর্যায়ের ক্যানসারের লক্ষণ কমাতে, ক্যানসারের প্রধান চিকিৎসা হিসেবে, অস্ত্রোপচারের আগে কোনো টিউমারের আকার কমাতে, অস্ত্রোপচারের পর অবশিষ্ট ক্যানসার কোষ নির্মূল করতে। একেক ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসায় শরীরের একেক জায়গায় রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। মুখ ও গলার ক্যানসারের প্রধান চিকিৎসা রেডিওথেরাপি। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রেও রেডিয়েশন দরকার হয়।
প্রথম দিকে ডিপ এক্স-রে থেরাপি দিয়ে এ চিকিৎসা করা হতো। এখন আধুনিক লিনিয়ার এক্সেলেটরভিত্তিক চিকিৎসা সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের। নতুন এ পদ্ধতিতে টিউমারের চিকিৎসা যেমন করা হয়; সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক কোষকেও সুরক্ষা দেয়।
আগেরেডিয়েশন থেরাপির পর ত্বক দেখলে মনে হতো ঝলসে গেছে। তবে নতুন প্রযুক্তিতে ত্বকের ক্ষতি না করে থেরাপি দেওয়া হয়। দেশের অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র রয়েছে। তবে থেরাপি দিতে হবে অভিজ্ঞ রেডিয়েশন অনকোলজিস্টদের দিয়ে।
ডা. রওশন আরা বেগম, সহযোগী অধ্যাপক, রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ, এনআইসিআরএইচ, মহাখালী