বর্ষায় ছত্রাকজনিত চর্মরোগ

সাধারণত শরীরের নানা ভাঁজ বিশেষ করে মুখ, গলা, পায়ের আঙুল, মলদ্বার, কুঁচকি, পিঠ, বুক ও মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস বা ছত্রাকজনিত সংক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়। দেশের উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া, প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ভিটামিনের ঘাটতি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, সঠিক পোশাক ব্যবহার না করা, ওষুধের ডোজ পূর্ণ না করাসহ নানা কারণে ছত্রাকজনিত চর্মরোগ ও এর প্রদাহ বেড়ে চলেছে।

ছত্রাকজনিত চর্মরোগের নানা ধরন আছে। ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণকে বলা হয় টিনিয়া বা দাদ। পায়ের পাতায় সংক্রমণ হলে বলা হয় টিনিয়া পেডিস বা অ্যাথলেট ফুট। পিঠ, বুক, পেট ও হাত-পায়ে সংক্রমণ হলে বলা হয় টিনিয়া করোপোরিস বা রিংওয়ার্ম। এ ছাড়া কুঁচকির দাদকে টিনিয়া ক্রুরিস, নখের দাদকে টিনিয়া আঙ্গুয়াম ও মাথার ত্বকের দাদকে বলা হয় টিনিয়া ক্যাপাইটিস।

দাদ হলে প্রচণ্ড চুলকানি হয়। আক্রান্ত স্থানে ত্বকের ওপর গোলাকার/চাকার মতো ক্ষত তৈরি হয়। ক্ষতস্থানের চামড়া খুশকির মতো সাদা হয়ে যায়। আক্রান্ত অংশে পানি বা পুঁজভর্তি দানা দেখা দেয়। নখে ছত্রাক সংক্রমণ হলে নখ ভঙ্গুর ও অস্বচ্ছ হয়। কুঁচকি বা কোমরে হলে চামড়া সাদা ও পুরু হয়ে যায়।

যেসব কারণে সংক্রমণ

  • ত্বক দীর্ঘ সময় ভেজা থাকলে

  • বারবার একই মোজা ব্যবহার এবং আঁটসাঁট জুতা পরলে পা ঘেমে যায়

  • জুতা ছাড়া খালি পায়ে হাঁটলে

  • সব সময় আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে স্থানে অবস্থান

  • ব্যবহৃত জামাকাপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখলে

  • ঘামে ভেজা কাপড় না ধুয়ে আবার করলে

  • সংক্রমিত ব্যক্তির তোয়ালে, বিছানা ও কাপড় ব্যবহার করলে

  • ঘরে রোগাক্রান্ত বিড়াল বা অন্যান্য প্রাণী থাকলে

চিকিৎসা কী

চিকিৎসা নিলে ছত্রাকজনিত রোগ ভালো হয়। তবে কিছুদিন পর আবার দেখা দেয়। এর অন্যতম কারণ, কিছুটা সুস্থ হলেই রোগীরা ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেন। আবার রোগী আগের ব্যবহৃত কাপড়চোপড়, চাদর, তোয়ালে ভালোভাবে পরিষ্কার না করে ব্যবহার করলে এই রোগ দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো এর নিরাময় কঠিন হয়ে উঠতে পারে। ডায়াবেটিস থাকলে বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

সচেতন হতে হবে

দৈনন্দিন জীবনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সংক্রমিত স্থান বারবার ধুয়ে পরিষ্কার ও শুকনা রাখতে হবে। অন্যের জিনিস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আক্রান্ত স্থান স্পর্শ করলে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। খালি পায়ে হাঁটা ঠিক নয়।

ঘেমে গেলে দ্রুত পোশাক পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিদিন গোসল করতে হবে। নোংরা পানি গায়ে বা পায়ে লাগলে দ্রুত ধুয়ে ফেলতে হবে। ত্বকের ভাঁজ সব সময় শুকনা রাখার চেষ্টা করতে হবে। সহজে বাতাস চলাচল করে, এমন জুতা পরতে হবে।

  • ডা. লুবনা খন্দকার, সহযোগী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ, আলোক হেলথ কেয়ার লি., মিরপুর ১০, ঢাকা