কিডনি রোগীরা কি রোজা রাখতে পারবেন
কিডনি জটিলতায় থাকা রোগীরা অনেক সময় রোজা রাখতে চান। সে ক্ষেত্রে তাঁদের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ পানি পান এবং পানির ভারসাম্য বজায় রাখা বিশেষভাবে জরুরি। সাধারণত কিডনির রোগী, যাঁদের ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স রেট ৬০ মিলিলিটারের কম, তাঁদের রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়। ২৪ ঘণ্টা প্রস্রাব সংগ্রহ করে এই পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। কারণ, পানিশূন্যতা হয়ে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যেতে পারে।
কিডনি রোগীদের পটাশিয়াম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। ফলের মধ্যে পেয়ারা এবং আপেলে পটাশিয়াম কম থাকে, তাই এই ফল খেতে পারবেন। অন্যদিকে ডাবের পানি, কলা, লেবু, চা, টমেটোতে পটাশিয়াম বেশি থাকে, তাই এগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য খাবার খেতে হবে। শাকসবজি রান্নার পর পানি ফেলে দিতে হবে।
মাছ বা মাংস এক টুকরার বেশি খাবেন না।
ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে কলিজা, কিডনি, গরুর মাংস, সামুদ্রিক মাছ খাবেন না।
ডায়াবেটিসের কারণে কিডনি রোগ হয়ে থাকলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। রমজানে তিন বেলা খাবার খেতে হবে। ইফতার, রাতের খাবার, সাহ্রি—কোনটা যেন বাদ না পড়ে।
ইনসুলিন যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁরা সকালের ডোজ দেবেন ইফতারের সময় এবং রাতের ডোজ রাতের সময় না দিয়ে, সেই ডোজের অর্ধেক বা তিন ভাগের একভাগ দেবেন সাহ্রির সময়। রমজানে রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করতে হবে অন্তত তিনবার। দুপুর ১২টায়, ইফতারের আগে ও ইফতারের দুই ঘণ্টা পরে।
দুপুর ১২টায় যদি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে চার মিলিমোল/লিটার হয় (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) বা যদি চার মিলিমোল/লিটারের বেশি হলেও হাত কাঁপা, ঘাম হওয়া, বুক ধড়ফড় ইত্যাদি হাইপোগ্লাইসেমিয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে রোজা ভেঙে গ্লুকোজ বা চিনির শরবত খেয়ে নিতে হবে। অন্যথায় রোগী জ্ঞান হারাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে শিরায় গ্লুকোজ স্যালাইন দিতে হবে।
রক্তচাপ খুব বেশি থাকা বা খুব কম থাকা, দুটিই কিডনি রোগের জন্য খারাপ। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা যেন না বাড়ে, সেই লক্ষ্যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রয়োজনে ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ডা. রোজানা রউফ, অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হসপিটাল