টয়লেটে মুঠোফোন চালিয়ে পাইলসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন না তো?
কাজে–অকাজে আমরা মুঠোফোনে এতই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি যে তা শরীর, মন, এমনকি সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এমনকি টয়লেটেও নিয়ে যাচ্ছি যন্ত্রটি। সন্দেহ নেই, এটি ভীষণ অস্বাস্থ্যকর এক অভ্যাস। এমনকি লম্বা সময় ধরে কমোডে বসে মুঠোফোন চালানোর ফলে পাইলসের মতো কষ্টকর রোগের ঝুঁকিও বাড়ে। এ সম্পর্কে জানালেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের জেনারেল সার্জারি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. ইসরাত ফয়সাল।
পাইলস কী
কেন এমনটা ঘটে, তা বুঝতে হলে পাইলস আদতে কী, তা একটু জেনে নেওয়া প্রয়োজন। মলদ্বারে যেসব রক্তনালি থাকে, সেসবের কোনোটা যদি ফুলে যায়, তাহলে সেটিকেই সাধারণভাবে পাইলস বলা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দীর্ঘ সময় মলদ্বারে চাপ দেওয়ার কারণে পাইলস হয়।
দীর্ঘ সময় কমোডে বসে মুঠোফোন চালালে যা হয়
এতে দুটি বিষয় ঘটে। একটি হলো, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় বসে থাকার ফলে ক্ষতি। তাতে কী ঘটে? কমোডের উচ্চতা যেমনই হোক না কেন, কমোডে বসে থাকা অবস্থায় দেহে সঞ্চালিত রক্তের বেশ অনেকটাই সেই সময় মলদ্বারের রক্তনালিতে নেমে আসে। ফলে সেখানকার রক্তনালিতে বাড়তি চাপ পড়তে পারে। দীর্ঘদিন ধরে লম্বা সময়ের জন্য এভাবে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণেই কিন্তু ওই রক্তনালিগুলো ফুলে যেতে পারে। অর্থাৎ হতে পারে পাইলস।
আরেকটি বিষয় হলো, যখন আপনি টয়লেটে বসে মুঠোফোনে স্ক্রল করছেন, তখন আপনার মনোযোগ অনেকটাই সেদিকে চলে যায়। আপনি যে প্রয়োজনে টয়লেটে গেছেন, সেদিকে আপনার খুব একটা খেয়াল থাকে না। এ অবস্থায় কিন্তু স্বাভাবিকভাবে মল নিষ্কাশনও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, মল নিষ্কাশনের সঙ্গে স্নায়বিক নানা বিষয় যুক্ত থাকে। স্বাভাবিকভাবে মল নিষ্কাশন হতে না পারার ফলে পরবর্তী সময়ে তা আপনার মলাশয়ে জমা থাকতে থাকতে শক্ত হতে থাকবে। অর্থাৎ আপনি কোষ্টকাঠিন্যে ভুগবেন। কোষ্টকাঠিন্য হয়ে গেলে তখন কিন্তু এমনিতেও আপনার মলত্যাগের সময় বাড়তি চাপ দিতে হবে। ফলে বাড়বে পাইলসের ঝুঁকি।
ঝুঁকি এড়াতে কী করবেন
বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল বলছে, টয়লেটে দীর্ঘ সময় বসে থাকার সঙ্গে পাইলসের ঝুঁকির সম্পর্ক আছে। এ ঝুঁকি এড়াতে কী করবেন, সেটিও জেনে নিন ডা. ইসরাত ফয়সালের কাছ থেকেই।
টয়লেটে মুঠোফোন নিয়ে যাওয়া যাবে না। দীর্ঘ সময় টয়লেটে বসে থাকার অভ্যাস থাকলে তা থেকে বেরিয়ে আসুন। বই, পত্রিকা, মুঠোফোন—কোনোটি নিয়েই টয়লেটে সময় কাটাবেন না।
টয়লেটে বসার পর বেশ কিছুক্ষণ পেরিয়ে গেলেও মল নিষ্কাশন না হলে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া যাবে না। বেরিয়ে এসে একটু হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।
সারা দিন পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে। কলা খেতে পারেন। যেসব ফল খোসাসমেত খাওয়া যায়, সেসবের খোসা ফেলবেন না।
প্রয়োজনে ইসপগুলের ভুসি খেতে পারেন। রোজ রাতে এক গ্লাস পানিতে এক চা–চামচ ভুসি মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে ফেলুন। ভুসি লম্বা সময় ভিজিয়ে রেখে খেতে নেই।
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
মল নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে তা আটকে রাখতে নেই। তাতে কোষ্টকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ে। বাড়ে পাইলসের ঝুঁকিও।