এন্ডোমেট্রিওসিস সম্পর্কে যা জানা জরুরি

মেয়েদের মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যথা বা যন্ত্রণার পেছনে একটি কারণ বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যমান, তা হলো এন্ডোমেট্রিওসিসছবি: জনস হপকিন্স মেডিসিন

মেয়েদের মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যথা বা যন্ত্রণার পেছনে একটি কারণ বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যমান, তা হলো এন্ডোমেট্রিওসিস। এতে জরায়ুর অভ্যন্তরীণ আস্তরণের মতো টিস্যু (এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু) জরায়ু ছাড়াও অন্যত্র—যেমন ডিম্বাশয়, জরায়ু বা তলপেটে (পেলভিক অঞ্চলে) বিকশিত হতে থাকে। মাসিকের সময় জরায়ুর পাশাপাশি এসব জায়গায়ও রক্তক্ষরণ হতে থাকে এবং প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ধীরে ধীরে এসব জায়গার টিস্যু বা কলাগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে লেগে যায়। পরে দেখা দেয় নানা জটিলতা। 

এন্ডোমেট্রিওসিস সম্পর্কে সচেতনতা

এন্ডোমেট্রিওসিসের উপসর্গ সম্পর্কে অনেক নারী জানেন না, জানলেও কী করতে হবে, কীভাবে এটি নির্ণয় বা চিকিৎসা করা হয়, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। এন্ডোমেট্রিওসিসের কিছু সাধারণ উপসর্গ রয়েছে, যেমন—

  • মাসিকের সময় বা তার আগে ও পরে পেটে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।

  • মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত বা অনিয়মিত মাসিক হওয়া।

  • যৌনমিলনের সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া।

  • গর্ভধারণে সমস্যা হওয়া।

  • পেটে চাপ অনুভূত হওয়া, পিঠে ব্যথা বা শৌচকর্মের সময় ব্যথা হওয়া।

  • ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা মূত্রাশয়ের সমস্যা। এ ধরনের সমস্যা দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন

এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণ

এন্ডোমেট্রিওসিসের সঠিক কারণ এখনো পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। তবে কিছু কারণ বা ঝুঁকি–ফ্যাক্টর পাওয়া গেছে, যেগুলো এই রোগের জন্য দায়ী হতে পারে—

  • পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে, পরবর্তী প্রজন্মেও এটি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

  • যদি জরায়ুর ভেতরের স্তর সঠিকভাবে মেনস্ট্রুয়াল ফ্লো হতে না পারে, তবে তা শরীরের বাইরে গিয়ে বৃদ্ধি পেতে পারে।

  • দুর্বল ইমিউন সিস্টেমে শরীরের অন্যান্য অংশে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে, যা এন্ডোমেট্রিওসিস সৃষ্টি করে।

চিকিৎসা

এন্ডোমেট্রিওসিসের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে এর বিভিন্ন উপসর্গ কমাতে এবং রোগীর জীবনযাত্রা সহজ করতে কয়েকটি চিকিৎসাপদ্ধতি রয়েছে। যেমন—

  • ব্যথা কমাতে ব্যথানাশক, যেমন প্যারাসিটামল বা ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া হরমোন থেরাপিও সাহায্য করতে পারে।

  • ওষুধের মাধ্যমে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সার্জারি করা হতে পারে। এ ধরনের সার্জারিতে এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যুগুলো সরিয়ে ফেলা হয়, যা ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।

  • পেটের ব্যথা কমাতে কিছু ফিজিওথেরাপি–পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া মানসিক সমর্থন এবং কাউন্সেলিংও রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।

ডা. শারমিন আব্বাসি, বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ ও গাইনোকোলজিস্ট

আরও পড়ুন