দেশে নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অসংখ্য মানুষ। মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে অনেকেই চিরতরে হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এ ছাড়া গাছ থেকে পড়ে, ভারী বস্তা ওঠাতে গিয়ে বা অন্য যেকোনো দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়া রোগীর সংখ্যা কম নয়।
কেউ যদি মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকে প্রথমে সোজা করে শুইয়ে দিন, কোনোরকম নড়াচড়া বা ম্যাসাজ করাবেন না। তারপর দ্রুত রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়া ব্যক্তির সাধারণত যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে—
১. হাত ও পায়ের অনুভূতি নষ্ট হতে পারে।
২. আঘাত মেরুদণ্ডের সারভাইক্যাল স্পাইনের ওপর দিকে হলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কারণ, এই জায়গা থেকে আমাদের রেসপিরেটরি বা শ্বাসযন্ত্রের মাংসপেশিগুলোর নার্ভ সাপ্লাই হয়ে থাকে। এসব রোগীকে খুবই সতর্কভাবে হাসপাতালে নিতে হবে, কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসও লাগতে পারে।
৩. গুরুতর আঘাত ওপরের দিকে বা ঘাড়ের কাছে সারভাইক্যাল স্পাইনে হলে প্যারাফ্লেজিয়া বা চার হাত–পা অবশ হয়ে যেতে পারে। লাম্বার স্পাইন বা কোমরের দিকে আঘাত পেলে সাধারণত দুই পা কোমর থেকে অবশ হয়ে যেতে পারে।
৪. রোগী প্রস্রাব–পায়খানার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারে।
প্রাথমিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা, পরিচর্যা এবং দরকার হলে অস্ত্রোপচারের পর এসব রোগীর পুনর্বাসনের জন্য চাই দীর্ঘমেয়াদি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, যা ধীরে ধীরে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। মেরুদণ্ডে আঘাতজনিত প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীকে আবার আগের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনতে ওষুধের পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা হলো আধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা।
এমন ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে দুই থেকে ছয় মাস পর্যন্ত নিয়মিত দিনে তিন-চারবার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীকে পুনর্বাসনের জন্য একটি চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করে থাকেন।
এর মধ্যে আছে ম্যানুয়াল থেরাপি, স্ট্রেনদেনিং এক্সারসাইজ, প্রগ্রেসিভ কন্ডিশনাল এক্সারসাইজ, প্যারালাল বার এক্সারসাইজ, গেট ট্রেনিং বা গেট রি-এডুকেশন এক্সারসাইজ, ইলেকট্রোথেরাপি বা ইলেকট্রিক্যাল ইস্টিমুলেশন থেরাপি, অকুপেশনাল ট্রেনিং, ব্লাডার ট্রেনিং ইত্যাদি রয়েছে।
এম ইয়াছিন আলী, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি