গর্ভধারণের সময় নারীর দেহ ও মনে নানা পরিবর্তন আসে। এরই অংশ হিসেবে খাদ্য গ্রহণ ও পরিপাকতন্ত্রের কাজেও কিছু পরিবর্তন আসে। যেমন সকালে বমি ও বমি বমি ভাব, গলা-বুক জ্বালা করা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। আবার এ সময়ে স্বাভাবিকভাবে কিছু নির্দিষ্ট খাবারের জন্য ক্রেভিং (তীব্র ইচ্ছা বা আকর্ষণ) হয় যেমন টক, মিষ্টি, ঝাল বা নোনতা খাবার। তবে কারও কারও অদ্ভুত কিছু জিনিস (খাদ্যবস্তু নয়) খাওয়ার ইচ্ছা করে, যা ‘পিকা’ নামে পরিচিত।
পিকা একধরনের ইটিং ডিজঅর্ডার। এতে আক্রান্ত ব্যক্তি মাটি, সাবান, বেকিং সোডা, ফ্রিজে জমা বরফ, কাগজ, দাঁতের মাজন, প্লাস্টিক, পা ও হাতের নখ, কয়লা, সিগারেটের ছাই, আঠা, চক, শ্যাম্পু ইত্যাদি খেয়ে থাকেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০ জন গর্ভবতী নারীর একজন পিকায় আক্রান্ত হন। গর্ভধারণের প্রথম পাঁচ সপ্তাহের মধ্যেই এর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পরবর্তী তিন মাসে ধীরে ধীরে এর তীব্রতা বাড়তে থাকে, শেষের দিকে কমে।
গর্ভাবস্থায় পিকা হওয়া মানে পুষ্টির ঘাটতি বা অপুষ্টি রয়েছে। সাধারণত যেসব নারীর শরীরে প্রয়োজনীয় খনিজের (আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম) ঘাটতি থাকে, তাঁদের মধ্যে অখাদ্য (মাটি) খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। আবার অনেক সময় মানসিক সমস্যা থেকেও পিকা দেখা দিতে পারে।
যেসব ক্ষতি হতে পারে
গর্ভাবস্থায় সঠিক সময়ে যদি পিকা নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তবে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে। সাধারণত অভোজ্য কিছু খাওয়া মা ও শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত হয়।
হজম করা কঠিন, এমন অভোজ্য জিনিস খেলে তা সংক্রমণের কারণ হতে পারে। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণসহ বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, পেটে আলসার ও অন্ত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।
যা করতে পারেন
গর্ভাবস্থায় পিকার লক্ষণ শুরু হলে আচার বা চাটনি খেতে পারেন। চিনিমুক্ত চুইংগাম, এলাচের দানা চিবাতে পারেন।
ফলের রসের আইস কিউব করে রাখতে পারেন। সেটা খাওয়া যাবে।
এ সময় আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিংক ও ম্যাগনেসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় বেশি রাখতে হবে।
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যতালিকা করতে হবে। মিনারেল ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে।
মনে রাখুন
পিকা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে যথাযথ সুষম পুষ্টির মাধ্যমে পিকার প্রতিকার সম্ভব।
পিকার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ফাহমিদা হাশেম, জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ, ল্যাবএইড ওয়েলনেস সেন্টার, ঢাকা