ব্রেস্ট ফিডিং নিয়ে যা জানা উচিত

শিশুকে স্তন্যদানের ক্ষেত্রে মায়েদের কিছু প্রশ্ন বা দ্বিধা থাকে। অনেক সময় ব্রেস্ট ফিডিংয়ের ভুলে শিশু পর্যাপ্ত পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। তাই সন্তান জন্মের আগে থেকেই এ ব্যাপারে মায়ের জানা থাকা দরকার।

কখন স্তন্যদান শুরু করা উচিত

বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার এক-দুই ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের বুকে দিতে হবে। এ সময় বুকের দুধ কম থাকে। তবে প্রথম শাল দুধ শিশুর জন্য খুব দরকারি। প্রাথমিক অবস্থায় শিশুর খুব বেশি দুধের প্রয়োজন নেই। কেননা এ সময় তাদের শরীরে পানির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। মায়ের নিয়মিত দুধ আসতে শুরু করে সাধারণত তৃতীয় থেকে পঞ্চম দিনের মধ্যে।

সংক্রামক ব্যাধির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শাল দুধ অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষত, ডায়রিয়ার জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলে শাল দুধ। এটা অনেক সময় অজ্ঞতাবশত ফেলে দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে খাওয়ানো হয় মধু বা গ্লুকোজ পানি। শিশুর প্রথম পাঁচ মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া অন্য খাবার দেওয়া একেবারেই অনুচিত।

সব মা-ই কি বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন

সব মা-ই স্তন্যদান করতে পারেন। তবে স্তনের বিশেষ কিছু অসুখের সময় বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো বন্ধ রাখতে হবে; বিশেষত, স্তনের কোনো প্রদাহ কিংবা জটিল কোনো রোগ থাকলে।

কীভাবে বুকের দুধ খাওয়াবেন

সন্তান প্রসবের পর প্রথম কয়েক দিন ব্যথা-বেদনার কারণে মা ভালোভাবে বসতে পারেন না। সে জন্য শুয়ে স্তন্যদান করতে হবে। বাচ্চাকে মা পাশে নিয়ে শোবেন। বালিশ দিয়ে মা ও বাচ্চাকে সাপোর্ট দিতে হবে। স্তনবৃন্ত বাচ্চার চিবুক স্পর্শ করলে তার মুখ স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায়। বাচ্চা নিজেই স্তনবৃন্ত মুখের মধ্যে টেনে নেয়।

কতবার দুধ খাওয়াবেন

এর কোনো সঠিক উত্তর নেই। শিশুর যতবার প্রয়োজন পড়বে, ততবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ঘড়ির কাঁটার হিসাবে দুধ খাওয়ানো যায় না। জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চার ঘন ঘন খিদে লাগে। খিদে পেলে কাঁদে। তখনই বাচ্চাকে দুধ দিতে হবে।

প্রতিবার কত সময় খাওয়াবেন

এটি নির্ভর করে বাচ্চার চাহিদার ওপর। সাধারণত একই স্তন থেকে ৫-১০ মিনিট দুধ খেলে বাচ্চার পেট পুরে যায়। এক স্তন থেকে দুধ না দিয়ে দুটি থেকেই সমানভাবে দেওয়া উচিত। প্রথমে ডান স্তন থেকে শুরু করে বাঁ স্তনে গিয়ে দুধ দেওয়া শেষ করার অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো।

সতর্ক থাকতে হবে

অনেক সময় মায়ের স্তনে বেশি দুধ থাকায় বাচ্চার নাকে চাপ লাগতে পারে। ফলে তার নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। সে জন্য মাকে স্তন শিশুর নাকের সামনে থেকে আলতো করে নিজের দিকে চেপে রাখতে হবে যেন শ্বাসপ্রশ্বাসে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।

দুশ্চিন্তা দুধের নিঃসরণক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই মাকে হাসিখুশি থাকতে হবে। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ