ম্যাক্সওয়েল-কোহলির মতো ফিট ক্রিকেটাররাও কেন ক্র্যাম্পের শিকার হন?
কদিন আগেই দানবীয় এক ইনিংস খেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শরীরের সঙ্গে একপ্রকার যুদ্ধ করেই ২০১ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। মাংসপেশির টানে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল পা। তবুও থেমে না থেকে রূপকথা রচনা করেছেন ম্যাক্সওয়েল। শুধু ম্যাক্সওয়েল নন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে রেকর্ড গড়া ৫০তম সেঞ্চুরির পথেও বিরাট কোহলি শিকার হয়েছিলেন মাংসপেশির টানের। সেই টান উপেক্ষা করেই একদিনের ক্রিকেটে গড়েছেন ইতিহাস।
শুধু ম্যাক্সওয়েল বা বিরাট কোহলি নন, বড় ইনিংস খেলতে গেলেই চোটের কবলে পড়তে হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের। স্বাভাবিকভাবে একটা প্রশ্ন চলেই আসে, এত যে ফিটনেস ফিটনেস করেন খেলোয়াড়েরা, তারপরও এই ফিট খেলোয়াড়েরা কীভাবে খেলার মধ্যে চোটে আক্রান্ত হন?
ক্রিকেট যতটা না শরীরের খেলা, তারচেয়ে বেশি মনের খেলা। খেলার মাঠে তাই শারীরিক ফিটনেসের পাশাপাশি মনের জোরও থাকা চাই সমান। তাই বলে ফিট থাকলেই যে পুরো খেলা ফিটভাবে খেলা সম্ভব হবে, ব্যাপারটা তেমনও নয়। খেলার যেকোনো মুহূর্তে অনাহুত অতিথির মতো বাগড়া দিতে পারে মাংসপেশির টান। এটি সাধারণ কোনো চোট নয়, এর সৃষ্টি মাংসপেশির ওপর অতিরিক্ত চাপ থেকে। অতিরিক্ত চাপ থেকে তৈরি হয় অসহ্য ব্যথা। সাময়িক সময়ের জন্য মাংসপেশি কাজ করাও বন্ধ করে দেয়।
পানিশূন্যতা
মাংসপেশির টানের পেছনে সবচেয়ে বড় অণুঘটক হিসেবে কাজ করে পানিশূন্যতা। অন্যান্য খেলার চেয়ে ক্রিকেট খেলার দৈর্ঘ্য যেমন বেশি, তেমন বেশি শারীরিক কষ্টও। কাঠফাটা রোদের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সবই করতে হয়। ঝড়-বৃষ্টি সমস্যা তৈরি না করলেও নিয়মিতই রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে ম্যাচ খেলতে হয় খেলোয়াড়দের। যাতে শরীর থেকে বেড়িয়ে যায় বিশাল পরিমাণ পানি ও খনিজ লবণ। শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম মাংসপেশির সঞ্চালনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তাই খেলোয়াড়েরা যত বেশি মাঠে থাকেন, ক্র্যাম্পের আশঙ্কা তত বাড়তে থাকে।
মাংসপেশির ফ্যাটিগ
ক্রিকেট মুভমেন্টের খেলা। প্রতিটি বলে, প্রতিটি শটে থাকে মাংসপেশির মুভমেন্ট বা সঞ্চালন। তবে বেশিরভাগ সময় ক্রমাগত একই ধরনের মাংসপেশির সঞ্চালন করতে হয় খেলোয়াড়দের। টানা কয়েক ওভার বল করা কিংবা একাধারে অনেকক্ষণ ব্যাট করতে করতে মাংসপেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে, এই ক্লান্তি থেকেই বাড়ে মাংসপেশিতে টান পড়ার আশঙ্কা।
ফিট থাকলেও কেন লাগে টান
মাংসপেশির টানের সঙ্গে শারীরিকভাবে ফিট থাকার সম্পর্ক নেই বললেই চলে। কখনো কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেলেও সটান দাঁড়িয়ে থাকেন কোনো কোনো ব্যাটসম্যান, কখনো আবার কয়েক ওভার পার করতে না করতেই মাঠে স্ট্রেচ করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন কেউ কেউ। মাংসপেশির টান পুরোটাই নির্ভর করে ম্যাচ ও খেলোয়াড়ের পরিস্থিতির ওপর। তবে খেলাধুলার সময় যদি অনাকাঙ্ক্ষিত মাংসপেশির টান থেকে বাঁচতে চান, তবে নিজেকে ফিট রাখার পাশাপাশি খেলার সময়ও শরীরকে তৈরি রাখতে হবে। মাঠে নামার আগে ঠিকভাবে ওয়ার্ম আপ ও স্ট্রেচিং করা অনেকাংশেই মাংসপেশির টান থেকে শরীরকে রক্ষা করে। দীর্ঘসময় ব্যাটিং করতে হলে লক্ষ্য রাখতে হবে পানিশূন্যতার দিকে। অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে যে পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়, তার কিছুটা হলেও যাতে মাঠে পূরণ হয়। এ ছাড়া ম্যাচ এবং ট্রেনিং সেশনের মধ্যে মাংসপেশি যাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায়, সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া