ওজন কমানোসহ আরও যেসব কারণে খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া জরুরি
ব্যস্ত মানুষের দিনলিপিতে আরাম-আয়েশের জন্য বরাদ্দ সময় নেহাত কম। আয়েশ করে বসে খাবার চিবিয়ে খাওয়ারও যেন সময় নেই কারও কারও। কোনোমতে নাকে-মুখে দুটো গুঁজেই দে ছুট! তবে ধীরে–সুস্থে খাবার খাওয়া কিন্তু কোনো বিলাসী সময়যাপন নয়। সময় নিয়ে চিবিয়ে খাবার খাওয়া বিজ্ঞানসম্মত। ঠিক কী কী কারণে ভালোভাবে চিবিয়ে খাবার খাওয়া প্রয়োজন, জেনে নেওয়া যাক আজ।
ভালোভাবে চিবিয়ে খাবার খাওয়া হলে খাবারটা চূর্ণ হয়ে ছোট ছোট অংশে ভাগ হয়। তাতে খাবার হজম হয় সহজে। এ ছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ওজন কমাতে এর ভূমিকা। ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে গেলে আপনি চট করে খেয়ে উঠতে পারবেন না। আবার এই সময়টা আপনি খাবারের প্রতি মনোযোগীও থাকবেন। অর্থাৎ ধীরে–সুস্থে খাবার খেলে আপনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবেন। এমনটাই জানালেন রাজধানীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ডা. মুসআব খলিল।
হজম হবে ঠিকঠাক
খাবার হজম করার জন্য আমাদের পরিপাকতন্ত্রের ভেতরে যে ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে, তাতে নানান রকম এনজাইম কাজ করে। খাবারটা ভালোভাবে চূর্ণ হলে এসব এনজাইম ভালোভাবে কাজ করতে পারে। অর্থাৎ খাবার হজম হওয়ার প্রক্রিয়াটা সহজ হয়। এনজাইমের কাজ হয় ধাপে ধাপে। পাকস্থলী এবং পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য অংশের নিঃসৃত রসে তো বটেই, মুখের লালাতেও কিন্তু পরিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম থাকে।
খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ
ধীরে ধীরে খাওয়ার অর্থ হলো আপনি খাবারের প্রতি মনোযোগী থাকছেন। শরীরের খাবারের প্রয়োজন মিটে গেলে মস্তিষ্ক থেকেই সেই সংকেত আসে। ধীরে–সুস্থে মনোযোগ দিয়ে খাবার খেলে আপনি এই সংকেতটাকে অনুভব করতে পারবেন সহজেই। অর্থাৎ আপনি বুঝতে পারবেন, কখন থামতে হবে। ফলে আপনি অতিভোজন থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবেন। তাই আপনার ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
রসনাবিলাস
হুট করে খেয়ে উঠে গেলে আপনি খাবারের স্বাদটাই পাবেন না ঠিকঠাক। ধীরে–সুস্থে খেলে তবেই পাবেন তৃপ্তি। পরিতৃপ্ত প্রাণ কিন্তু একটু পরপরই কিছু না কিছু খাওয়ার জন্য আইঢাই করে ওঠে না। তাই সময় নিয়ে চিবিয়ে খাবার খেলে যখন–তখন টুকিটাকি খাবার খাওয়ার প্রবণতাও কমাতে পারবেন। যখন–তখন এটা–সেটা না খাওয়াটাও ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
খাবার আটকে যাওয়ার ঝুঁকি কমে
তাড়াহুড়া করে খেতে গেলে গলায় বাঁধতে পারে খাবারের টুকরা। যা হয়ে উঠতে পারে ভীষণ বিপজ্জনক। শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি যে এর ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। একটু ব্যাখ্যা করা যাক বিষয়টা। খাদ্যনালি আর শ্বাসনালির অবস্থান বলতে গেলে একেবারেই লাগোয়া। স্বাভাবিকভাবে যখন খাবার গিলে নিই আমরা, তখন ছোট একটা ঢাকনার মতো অংশ দিয়ে আমাদের শ্বাসনালিটা সুরক্ষিত হয়ে থাকে। কিন্তু তাড়াহুড়া করে খাবার খেতে গেলে এই নিরাপত্তাব্যবস্থা পুরোপুরি কার্যকর না-ও থাকতে পারে। অর্থাৎ খাবারের কোনো অংশ শ্বাসনালিতে চলে যেতে পারে। খাবারের ছোট কণা শ্বাসনালিতে প্রবেশ করলে সঙ্গে সঙ্গে কাশি হয় আমাদের, এ হলো আমাদের অজান্তে বিদ্যমান আরেক নিরাপত্তাব্যবস্থা। কাশির মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তুটি শ্বাসনালি থেকে বেরিয়ে আসে। কিন্তু তাড়াহুড়া করে খেতে গিয়ে যদি খাবারের কোনো অংশ এমনভাবে শ্বাসনালিতে আটকে যায়, যার ফলে সেখানে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে কিন্তু মহাবিপদ! এমন অবস্থায় অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই ধীরে–সুস্থে, ভালোভাবে চিবিয়ে খাবার খাওয়াই নিরাপদ।