বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ। তাঁদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২৬ লাখ। আর ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা ৮৪ লাখ।
অনেকের অন্য কোনো রোগ বা জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার পর ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। ডায়াবেটিস একটি নীরব ঘাতক। তাই চল্লিশোর্ধ্ব যেকোনো ব্যক্তির বছরে একবার ডায়াবেটিস আছে কি না, তা পরীক্ষা করা উচিত। এ ছাড়া উপসর্গ দেখা দিলে বা ঝুঁকি থাকলে এর আগেই পরীক্ষা করা উচিত।
যেসব লক্ষণে পরীক্ষা জরুরি
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা।
দুর্বল লাগা, ঘোর ঘোর ভাব।
ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া।
সময়মতো খাওয়াদাওয়া না হলে রক্তে শর্করা কমে হাইপো হওয়া।
মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া।
কোনো কারণ ছাড়া ওজন অনেকটা কমে যাওয়া।
শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া দীর্ঘদিনেও ভালো না হওয়া।
চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব।
বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা।
চোখে কম দেখতে শুরু করা।
যাঁদের ঝুঁকি বেশি
যাঁদের মা–বাবা, ভাই-বোন বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের ডায়াবেটিস রয়েছে।
যাঁরা নিয়মিত হাঁটাচলা বা শারীরিক পরিশ্রম করেন না, অলস বা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেন।
অন্তঃসত্ত্বা নারী। তাঁদের ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক।
হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি।
যাঁদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি।
উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে যাঁদের।
স্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তি।
যেসব শিশুর ওজন বেশি, যাদের মায়ের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়েছিল।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
ডায়াবেটিস এমন একটি শারীরিক অবস্থা, যা সারা জীবনের জন্য বয়ে বেড়াতে হয়। বিশ্বে এর কারণে প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক হতে পারে।
নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিডনি।
অনেক সময় শরীরের নিম্নাঙ্গ কেটেও ফেলতে হতে পারে।
ডায়াবেটিসের এত ঝুঁকি থাকার পরও যত মানুষ এ রোগে আক্রান্ত, তাঁদের অর্ধেকেরও বেশি রোগটি সম্পর্কে সচেতন নন। সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিসের সমস্যা বাড়ছে। বর্তমানে এতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪২ কোটির বেশি। ৩০ বছর আগের তুলনায় এ সংখ্যা চার গুণ। এ হিসাব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।
করণীয়
বছরে অবশ্যই একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে হবে। ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. মো. তালহা চৌধুরী, কনসালট্যান্ট, ফ্যামিলি মেডিসিন বিভাগ, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা